জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পানিতে ইতিমধ্যে সিলেট নগরী সহ পার্শ্ববর্তী নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা সহ দক্ষিণ সুরমা, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট এলাকার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজি ও কৃষি ফসল অনেকটা তলিয়ে গেছে। আগামী ১৫ দিন সিলেটে অতিবৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিলেটে হতে পারে বন্যা। এ পরিস্থিতিতে নগদ টাকাসহ ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত করা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা’ শেষে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান বলেন- ‘সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে- আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কদিনে ১৪ শ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। এই লক্ষ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছি। সকলের কাছ থেকে নিজ নিজ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান- নদী সংবলিত উপজেলাগুলোর নদীতে গত কয়েকদিনে বেশ পানি বেড়েছে। তবে এখনো বিপদসীমার উপরে উঠেনি। তারা (নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান) জানিয়েছেন, নিজ নিজ উপজেলায় নগদ অর্থ ও চাল মওজুদ রয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। নতুন করে চাহিদা পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মওজুদ রয়েছে। চাহিদামতো উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এক প্রশ্নের জবাবে মোঃ মজিবর রহমান জানান- গত বছরের বন্যার সময় তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে আবারও প্রস্তুত করা হবে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রের তালিকা নতুন করে তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেট মহানগর এলাকায় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের জন্য গতবারের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কয়েকটি পরিবর্তন করা হতে পারে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ৩-৪ লাখ টাকা করে স্টিলের দুটি বড় নৌকা ক্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কারণ- গত বছরের দফায় দফায় বন্যায় বড় নৌকার অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা’য় সিলেটে সিটি করপোরেশন, সিলেট মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই এলাকার প্রধান সড়ক সহ পার্শ্ববর্তী খোজারখলা, মোমিনখলা সহ বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়।
সিলেট সদর উপজেলার সাহেবের বাজারে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বাজারতল গ্রামের অসংখ্য পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।সাহেবের বাজার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্র একই। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় কলেজের মাঠ ও শ্রেনী কক্ষের ভিতর পানি ডুকে পড়লে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। বাধ্য হয়ে গতকাল বুধবার কলেজ কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
এ গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারের দুর্ভোগের শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি ডুকে পড়ে। যার ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
তিনি লেখেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা ও মেঘালয় পর্বতের সীমান্তবর্তী স্থানে (চেরাপুঞ্জি নামক স্থানে) খুবই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪ জুন দুপুর পর্যন্ত। এরপর ১৪ জুন দিবাগত মধ্যরাতের পর থেকে আজ ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে ও এখনও চলছে।
বৃহস্পতিবার দিন শেষে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী স্থানের নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করছে আবহাওয়ার সব পূর্বাভস মডেল।
আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা ও মেঘালয় পর্বতের সীমান্তবর্তী স্থানে (চেরাপুঞ্জি নামক স্থানে) ১০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে প্রধান-প্রধান আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো।
শেষে তিনি লেখেন, উপরের পূর্বাভাস সঠিক হলে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে একটি মাঝারি মানের বন্যার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে ১৬ জুন থেকে ২৫ জুনের মধ্যে।
এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বৃষ্টিপাতের কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি