জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
নতুন বছরে নতুন শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছেন স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা । আর এই আনন্দমাত্রায় যোগ হচ্ছে বিনমূল্যে নতুন বই উৎসব।
সোমবার সিলেটের প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসার শিশুরা পেয়েছে বিনামূল্যে নতুন বই। নতুন বইয়ের ছোঁয়া পেয়ে উৎসব উল্লাসে মেতেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সকাল থেকে বিভাগের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ও মাদ্রাসায় সকাল থেকে বই উৎসব শুরু হয়। এবার বই উৎসব উপলক্ষ্যে প্রতিটা স্কুল-মাদ্রাসার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকতার জন্য সিলেটে সরকারীভাবে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়।
এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ‘বই উৎসব ২০২৪’ উদ্বোধন করেন সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানারর সভাপতিত্বে উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হোসাইন মো. আল জুনায়েদ ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসব ২০২৪ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একে একে সিলেটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ উৎসব উদযাপন হয়।
এদিকে সোমবার (১লা জানুয়ারি) সকালে নগরীর ৮নং ওয়ার্ডের আখালিয়া বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খুদে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেলা ১১টার পর রঙ বেরঙের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কোর্পোরশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নতুন বছরের নতুন বই হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, তাতে আমরা সফল হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণে এ সফলতা। তিনি বলেন, সারাদেশের মতো বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় বই উৎসব পালন । বছরের শুরুতে সিলেটে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন বই পাওয়াতে সকলে খুশি। আশা করি সকলে নতুন বই পেয়ে পড়ায় মনোযোগী হবে। তিনি আরোও বলেন আগামী দিনে বাংলাদেশ যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে, আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর যে পথ, সেখানে পৌঁছানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় আমাদের শিক্ষা। এবং সেই শিক্ষার উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন-নগরীর ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস বলেন, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর শিক্ষার মূল ভিত্তি হল প্রাথমিক শিক্ষা।শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমি তোমাদের অনুরোধ করব ভালোভাবে লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। যাতে করে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া সোনার বাংলা গড়তে পারি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর রেবেকা বেগম বেনু।
আখালিয়া বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষাক অর্জুন চন্দ্র দাশ এর সভাপতিত্বে ও সহকারী শিক্ষক শিমুল চক্রবর্তী এর পরিচালন,শুরতে পবিত্র কোরআন থেকে তেরাওয়াত করেন-ছাত্র মোঃ সুজন আহমদ-এবং গ্রীতা পাঠন করেন শ্রাবন্তী রানি দাস।
অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন,শিক্ষা পরামর্শক সিটি কর্পোরেশন অনীর কৃষ্ণ মজুন্দার, শিক্ষা কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ, বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিক কমি সদস্য নুরুজ্জামান শাহজাহান, নজরুল ইসলাম নজুসহ বিভিন্ন অতিথি বৃন্দ।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলার ৯ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ জন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্রমান্বয়ে ৭৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৫টি বই বিতরণ করা হবে।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মহসিনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তাদের আওতায় মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসায় (দাখিল পর্যন্ত) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০১ জন। বছরের প্রথম দিনে তাদের ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৮২০টি বই তুলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসায় (দাখিল পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদা ছিল সামান্য একটু বেশি। প্রায় শতভাগ বই চলে এসেছে। যে সামান্য বাকি ছিল সেগুলো প্রতিদিনই চলে আসছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত এরশেদ জানান, জেলায় প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে বইয়ের চাহিদা ছিল ২৩ লাখ ৪১ হাজার ১৬৫টি। এরই মধ্যে শতভাগ বই চলে এসেছে। যেগুলো বছরের প্রথম দিন থেকে বিতরণ শুরু হবে।
নতুন বই পেয়ে আনন্দে উৎসবে মাতছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে সেই আমেজ দেখা গেছে। অভিভাবকরাও সন্তানদের অগ্রগতিতে ও নতুন বই পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
এদিকে বই উৎসবে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি ও সমমান পর্যন্ত তিন কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে সারাদেশে প্রাক প্রাথমিকের ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন, প্রাথমিক স্তরের এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন, ইবতেদায়ির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন ।
মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক কোটি চার লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন, দাখিলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন, ইংরেজি ভার্সন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন, কারিগড়ির ট্রেড বই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৫২ জন, দাখিল ভোকেশনালের ছয় হাজার ১৫ জন ও ব্রেইল পদ্ধতির ৭২৪ জন; এই মোট তিন কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী পাবে বিনামূল্যে নতুন বই।
বই উৎসবে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি বই বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে শিক্ষক সহায়িকা রয়েছে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি