December 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 8th, 2021, 8:34 pm

সিলেটে ২১৭ অবৈধ ক্রসিংয়ে মরণফাঁদ আট মাসে ৪৩ মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেট জেলায় বৈধ লেভেল ক্রসিং ১২টি, অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন ৩১টি। সিলেট থেকে ছাতক পর্যন্ত বৈধ লেভেল ক্রসিং ১২টি আর অবৈধ ২৮টি। অপরদিকে মৌলভীবাজার জেলার আওতায় শ্রীমঙ্গল এলাকায় বৈধ মাত্র ২০টি আর অবৈধ ২৭টি, কুলাউড়া উপজেলার আওতায় বৈধ ২১টি আর অবৈধ ৬৮টি। একইভাবে হবিগঞ্জ জেলায় বৈধ মাত্র ২০টি আর অবৈধ ৬৩টি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা হোসেনপুর নামক স্থানে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত ট্রেন ধাক্কা দেয় একটি মাইক্রোবাসকে। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসের (নোহা) আরোহী শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয় বলে জানান কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং।’ তবে অবৈধ লেভেল ক্রসিং কিংবা মৃত্যুর হিসেব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।
আখাউড়া থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ছাতক পর্যন্ত মাত্র ১৫০ কিলোমিটারের মতো রেলপথে ‘অবৈধ’ বা অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং দুই শতাধিক। আর মৃত্যুর হিসেবে অগণন। অবৈধ এসব রেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ। বেখেয়ালে মানুষের চলাচল কিংবা গাড়ির পারাপারে ঘটছে অহরহ প্রাণহানি।
কিন্তু এসব লেভেল ক্রসিং বন্ধে নেয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে দ্রুত এসব লেভেল ক্রসিং বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে সিলেট রেলপথ প্রকৌশলের একটি সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত সিলেট বিভাগের আওতায় রেলপথ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মোট লেভেল ক্রসিং ৩০২টি। যার ৮৫টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা কর্মী বা সিগন্যাল ম্যান থাকলেও বাকি ২১৭টি অবৈধ বা অনুমোদনহীন থাকায় সবগুলোই অনিরাপদ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় বৈধ লেভেল ক্রসিং ১২টি, অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন ৩১টি। সিলেট থেকে ছাতক পর্যন্ত বৈধ লেভেল ক্রসিং ১২টি আর অবৈধ ২৮টি। অপরদিকে মৌলভীবাজার জেলার আওতায় শ্রীমঙ্গল এলাকায় বৈধ মাত্র ২০টি আর অবৈধ ২৭টি, কুলাউড়া উপজেলার আওতায় বৈধ ২১টি আর অবৈধ ৬৮টি। একইভাবে হবিগঞ্জ জেলায় বৈধ মাত্র ২০টি আর অবৈধ ৬৩টি।
অনুমোদনহীন বা অবৈধ এসব লেভেল ক্রসিং স্থানীয় এলাকাবাসী নিজের প্রয়োজনে তৈরি করেছেন। কিন্তু রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী রেলপথের ওপর দিয়ে কোনো পাশ্ব রাস্তা তৈরি করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অন্তত ২০ বছরের জন্য ৩ জন মানুষের মজুরি জমা দিয়ে তার পর রেল লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে হয়। অথচ সিলেট বিভাগজুড়ে এসব লেভেল ক্রসিং তৈরিতে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম। তাই অবৈধ অনিরাপদ ক্রসিং বাড়াচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। রেলওয়ে পুলিশ সিলেট জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে বিভিন্নভাবে। এসব ঘটনার প্রতিটিতেই অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মানুষ ইচ্ছামতো তাদের প্রয়োজনে রেলপথের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে। এতে দুর্ঘটনা বাড়লেও কোনোভাবেই লাগাম টানা সম্ভব হয় না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে এসব লেভেল ক্রসিং বন্ধ করা যায় না। আমরা বন্ধ করে এলেও পরে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তবে রেলওয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, রেলপথে যত মৃত্যু হয় সবগুলোর জন্য অপমৃত্যু মামলা হয়। আর পথ চাওয়া হলে আমরা সকল রকম সহযোগিতা করি।
অপরদিকে বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন সকল লেভেল ক্রসিং বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও সিলেটের এসব লেভেল ক্রসিং বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নে রেলপথ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) সিরাজ জিন্নাত বলেন, আমরা এগুলো বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রাশাসন, এলাকাবাসী সকলে মিলে সহযোগিতা করতে হবে। তা না হলে কোনো কাজে আসবে না। তবে দুর্ঘটনা বন্ধে সকল অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করা জরুরি বলে তিনিও মত দেন।