November 10, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 29th, 2022, 9:00 pm

সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক ক্ষত বিক্ষত, কবে হবে সংস্কার

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

স্থানে স্থানে পিচ খোয়া উঠে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া ছোট বড় গর্তে ক্ষত বিক্ষত গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক। গাড়ি এসব গর্তে হেলেদুলে উপরে নিচে ‘ঝাকাঝাকি’ করে অতিক্রম করছে অথবা গর্তে পড়ে আটকা পড়ছে। গর্তের কারণে ‘ঝাকাঝাকি’ ও অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ায় দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ রাস্তায় চলাচলকারী চরম দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা এই বর্ষায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠার আশঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। না হলে রাস্তাটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানবাজার-বড়লেখা সড়ক দিয়ে ৫টি উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ চলাচল করেন। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও মালামাল পরিবহনের জন্য শতশত ট্রাক, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ভারী লরি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সম্প্রতি বন্যা ও বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির চারখাই থেকে জকিগঞ্জ অংশ কিছুটা ভালো থাকলেও গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার অংশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কটির গোলাপগঞ্জ অংশের হেতিমগঞ্জ বাজার, কিসমত মাইজভাগ, বড়মোকাম, চরকরিয়া তেরমাইল অংশে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রানাপিং চকরিয়া অংশে সড়কটি পিচ খোয়া সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাদামাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন বাস-ট্রাক এই স্থানে আটকা পড়ছে। এতে দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসময় দীর্ঘ ও সময় ক্ষেপণকারী যানজট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ও প্রাইভেট গাড়ি গুলো আশপাশের গ্রামের রাস্তাগুলো ব্যবহার করায় গ্রামের সড়কগুলোর বেহলা অবস্থা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। গ্রামের রাস্তাগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা জানান, যানজটে আটকে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে অথবা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে যানজট অতিক্রম করে অন্য গাড়িতে যেতে বাধ্য হন। মহিলারাও কাদাজলে কাপড় নষ্ট করে হাঁটছেন। অনেক মহিলা শিশু কোলে নিয়ে ও জিনিসপত্র হাতে সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কাদামাটি মাড়িয়ে যানজট অতিক্রম করে অন্য গাড়িতে গিয়ে উঠছেন। দীর্ঘসময়ে যানজটে বসে অতিষ্ঠ বৃদ্ধ ও শিশুরাও হেঁটে যাওয়ার সময় কাদাজলে কাপড় নষ্ট ও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাদের দুর্ভোগ দেখে নিজেদের খারাপ লাগে বলে জানান গ্রামবাসী। তারা জানান, গ্রামের রাস্তা রক্ষা করতে তারা রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ দেখে তারা জরুরী সময়ে বাঁশ খুলে দিয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস বিন রিয়াসত জানান, তেরমাইল অংশে সড়কে পিচের অস্তিত্বই নেই। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পিচ খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন নিচের পাথর গুলোও সরে গিয়ে কাদামাটির সড়কে পরিণত হয়েছে এই অংশ। প্রতিদিন গাড়ি পড়ছে, পরে তোলা হচ্ছে আবার পড়ছে। এতে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়া শতশত গাড়ি ৩/ ৪ ঘন্টা আটকে থাকে। এসময় হাজারো মানুষে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকেন। মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের পরেও কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এখনো এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন বলে জানা যায়নি।
এদিকে, সড়কের বিয়ানীবাজার অংশের রামধা থেকে চারখাই এর গাছতলা অংশে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত দ্রুত সংস্কার না করলে গর্ত আরো বড় হয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া, দুবাগ থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল এবং সেসময় বড় বড় ট্রাক্টর দিয়ে মানুষ রাস্তায় চলাচল করেছেন। এখন পানি কমার পর পুরো সড়ক জুড়ে অসংখ্য গর্তে যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
দুবাগ থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত পুরো সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত তবে আঙ্গারজুরের পুল সংলগ্ন কুশিয়ারা ব্রিক ফিল্ড অংশ, দীঘিরপার, তেলাদল ৩৯এর পুল, কাকরদি বাজার সংলগ্ন হেলাল মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন এবং থানাবাজার ও বারইগ্রামের মধ্যবর্তি এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে গাড়ি পড়ে হেলে দুলে যায়। অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হোন বলে জানান স্থানীয়রা।
ছাত্র জমিয়ত বিয়ানীবাজার উপজেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ জানান, সড়কের রামধা গাছতলা অংশ এবং দুবাগ থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন দফা পানি সড়কের অনেকাংশ তলিয়ে ছিল। ফলে সড়কটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খানাখন্দের কারণে যাতায়াতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় খাড়াভরা গ্রামের মাহবুব আহমদ জানান, সড়ক দিয়ে একবার গেলেই অসুস্থ অনুভব হয়। প্রায় পুরো যাত্রাই ঝাঁকুনির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বড় বড় গর্ত হেলেদুলে অতিক্রমের সময় থেমে থেমে ঝাঁকুনি আবার কিছু সময় চলা আবার ঝাঁকুনিতে এক চরম অস্বস্থির মধ্যে দিয়ে যেতো হয়। আবার যানজটে আটকা পড়লেতো দুর্ভোগের সীমা নেই। রাস্তার দুর্ভোগের ভয়ে বাড়ির অসুস্থদের নিয়েও চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে ভয় হয়। সড়কটি দ্রুত সংষ্কার না করলে চলতি বর্ষায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
গোলাপগঞ্জের তেরমাইল অংশের গর্তে গাড়ি পড়ার পর দীর্ঘযানজট এবং বিয়ানীবাজার সড়কে খানাখন্দে বাস চলাচল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সিলেট বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দিয়ে শুধু যাত্রীই নয় যানচলে চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকা, ভাঙ্গা সড়কে গাড়ি চালানো। গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যেও পৌঁছাতে পারছেন না তারা। তিনি সড়কটি দ্রুত সংস্কার না করা হলে তারা গাড়ি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন বলে জানান। সড়কটি সংষ্কার না হওয়া পর্যন্ত লোড ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সড়কের বড় গর্ত বা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোতে কাজ করা হচ্ছে যাতে গাড়ি আটকে না যায়। গোলাপগঞ্জের তেরমাইল অংশ গত সোমবার রাত থেকে কাজ চলছে। তিনি জানান, বন্যায় রাস্তায় পানিতে তলিয়ে রাস্তার নিচের মাটি সরে যাওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কের গভীর থেকে বালি দিয়ে ভরাট করতে হচ্ছে। এই মূহূর্তে সম্পূর্ণ নতুন করে সংষ্কার কাজ করা যাচ্ছে না তবে বড় গর্ত বা গাড়ি আটকে যায় এমন অবস্থা থাকবেনা এবং তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন বলে আশস্ত করেন তিনি।
এদিকে খানাখন্দের গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদায় সিলেট-শেওলা স্থলবন্দর রাস্তার বেহাল অবস্থা তৈরী হয়েছে।
এতে রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়েপড়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি।
সংশ্লস্টিরা জানিয়েছেন, সড়কটি জরুরীভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হবে।
শেওলা স্থল বন্দর সিলেট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ন স্থল বন্দর। ভারত হতে বিপুল পরিমানে পাথর, কয়লা, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী পিয়াজ ও আদা আমদানী হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশ হতে বিপুল পরিমানে সিমেন্ট, মাছ, তুলা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী রপ্তানী হয়ে থাকে। তাছাড়া শেওলা বর্ডার দিয়ে শত শত যাত্রী ভারতে যাতায়াত করে।
একই অবস্থা সিলেট-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কের। ছোটবড় গর্ত আর ভাঙ্গা সড়কে মানুষের দূর্ভোগ কেবল বাড়ছেই।
বিভাগীয় শহর সিলেটের সাথে বিয়ানীবাজার উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সবদিক দিয়েই ঝূঁকিপূর্ণ। কবে এই উপজেলাবাসীর যোগাযোগ বিড়ম্বনার অবসান হবে, তা কেউ বলতে পারছেনা।