December 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, July 14th, 2023, 8:43 pm

সুদানের ভয়াবহতা নিয়ে যা জানালেন গণকবরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি

অনলাইন ডেস্ক :

সীমান্ত পেরিয়ে চাঁদে পালিয়ে যাওয়ার আগে সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরে যা দেখেছিলেন তাতে বেশ মর্মাহত মালিম (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা যদি জানতে পারে আমি এই ছবি ও ভিডিওগুলো দেখিয়েছি এবং আমি নিজে ভিডিও করেছি, তবে আর বেঁচে থাকতে পারব না।’ কিছু বিকৃত মরদেহের ছবি দেখিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মালিম। তার কথামতোই নিরাপত্তার কারণে মালিমের আসল পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। সুদান ছাড়ার আগে রাস্তা থেকে মৃতদেহগুলো সরিয়ে গণকবরে দাফনকারী দলের সদস্য ছিলেন মালিম। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দেশটির আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। আরএসএফের উৎপত্তিস্থল দারফুরেই চলে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই। মালিমের ধারণ করা ছবিগুলোতে দেখা গেছে অন্তত কয়েক ডজন মৃতদেহ। এদের মধ্যে কিছু লাশ কম্বল ও পোশাকে আবৃত। কিছু লাশ ফুলে উঠেছে এবং পচেও গেছে। সাহায্য সংস্থার কম্পাউন্ডের কিছু ছবিও দেখিয়েছিলেন মালিম। যেখানে চালানো হয়েছিল ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট। মালিম বলেন, ‘যারা মারা গেছেন তারা প্রচন্ড আতঙ্ক নিয়ে মারা গেছেন।

অনেক মরদেহ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় রাস্তায় পড়ে ছিল।’ মালিম ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ভিডিও করেছিলেন। সেখানে দেখা যায়, লরি থেকে একটি গণকবরে মৃতদেহগুলো ফেলা হচ্ছে। মালিম বলেন, ‘আমরা মৃতদেহ কবর দিতে বনের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আরএসএফ তা করতে দেয়নি। মৃতদেহগুলোকে একটি গর্তে ফেলতে ট্রাকের চালককে নির্দেশ দিয়েছিল ওরা।’ এরপর তাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আরএসএফ। মালিম আরো বলেন, ‘মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন করা উচিত ছিল মরদেহগুলোর। তাদের জন্য প্রার্থনা করারও দরকার ছিল। কিন্তু আরএসএফ তাদের আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলেছে।’ লাশগুলো কার বা কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে কেউ এখনো নিশ্চিত নয়। কিন্তু যে পরিবারগুলো চাঁদে আশ্রয় চেয়েছে, তারা বলছে, আরএসএফ পশ্চিম দারফুরের যুবক ও ছেলেদেরকেই টার্গেট করছে। তাদের ধরে এনে হত্যা করেছে। পরিবারগুলো বলছে, আরব নয় এমন সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকেই মূলত টার্গেট করা হয়েছে। তারা আরো জানায়, আরএসএফ চেকপয়েন্টে থেমে ওদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদও করছে।

আরএসএফের কাছে এই অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছিল বিবিসি। তবে তারা মন্তব্য করেনি। ১৩ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে মালিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, পশ্চিম দারফুরে একটি গণকবরে ৮৭ মাসালিত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে আরএসএফ হত্যা করে গণকবর দেয় এবং অন্যান্যের মৃতদেহ ফেলে দিতে বাধ্য করা হয়। মালিমের ফোনে থাকা ছবি ও ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০ ও ২১ জুনের মধ্যে এগুলো ধারণ করা হয়েছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও একই তারিখ উল্লেখ করা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মালিম তাদের জানিয়েছে, মৃতদেহগুলো আল-তুরাব আল-আহমার নামে একটি খোলা জায়গায়, এল জেনেইনার পশ্চিমে এবং একটি পুলিশ ঘাঁটির কাছে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু মানুষ চিকিৎসা না পেয়েও মারা গিয়েছিল। মালিমের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মৃতদেহের স্তূপের মধ্যে একজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। হতভাগা ওই ব্যক্তির শুকনো, ফাটা ঠোঁটের চারপাশে মাছি উড়তেও দেখা গেছে। কষ্ট করে সে কথা বলারও চেষ্টা করেছে। মালিম জানিয়েছেন, নিজের শহরে কী ঘটছে তার রেকর্ড রাখতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিডিও ধারণ করেন তিনি। তিনি বুঝতে পেরেছেন, এই শহর তার জন্য নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পেয়েছিলাম, কারণ মৃতদেহগুলো সরানোর সময় আরএসএফ একাধিকবার এমন ব্যক্তিদের খুঁজছিল, যাদের কাছে মোবাইল ফোন ছিল।’ সুদানের দারফুরের আরব ও কালো আফ্রিকান সম্প্রদায়গুলো বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষে লিপ্ত। সহিংসতা সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল দুই দশক আগে।

আরএসএফের জন্ম হয়েছিল জাঞ্জাউইদ আরব মিলিশিয়া থেকে, যারা বিদ্রোহকে নির্মমভাবে দমন করেছিল। কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তখন। গোষ্ঠীটি ব্যাপক নৃশংসতা এবং জাতিগত হত্যাকা-ের জন্যও অভিযুক্ত ছিল। এই ঘটনাকে ২১ শতকের প্রথম গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। সম্প্রতি আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয় এপ্রিলে। এই সংঘাত আবার প্রজ¦লিত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত মাসে, পশ্চিম দারফুরের গভর্নরকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি মাসালিত জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য আরএসএফকে দায়ী করেছিলেন। সূত্র : বিবিসি