October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 17th, 2023, 8:55 pm

সুন্দরগঞ্জে সরকারি বই বিক্রির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে প্রেরণ

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারি বই বিক্রির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মাজেদুর রহমান, ট্রাকচালক শ্যামল মিয়া ও চালকের সহকারি রাসেল মিয়া(৪২)কে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরআগে আজ ভোররাতে ট্রাক ও বইসহ চালক ও তার সহকারিকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু পশ্চিম থানা থেকে সুন্দরগঞ্জে আনা হয়। ট্রাক ও জব্দকৃত সরকারি বই সুন্দরগঞ্জ থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম মুঠোফোনে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বই পাচার করে বিক্রির ঘটনায় জনগণের সন্দেহের তীর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডলের দিকে। তাদের মতে নিজেকে বাঁচাতে শিক্ষা কর্মকর্তা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি বাদি হয়ে শুধুমাত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক মাজেদুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অথচ ঢাকা এনসিটিবি থেকে পাঠানো ওইসব বই গ্রহন ও বিতরণের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার, হিসাব রক্ষক, অফিস সহকারি, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তা প্রহরী। কিন্তু শুধুমাত্র অফিস সহায়ককে আসামি করে মামলা করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, একজন অফিস সহায়ক কখনো একাই একাজ ঘটাতে পারে না। বই পাচারের সঙ্গে মাধ্যমিক অফিসের আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে। তাদের যোগসাজস ছাড়া বিপুল পরিমান বই পাচারের ঘটনা ঘটতে পারে না। উপজেলা শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী মোশাররফ হোসেন বুলু বলেন, এর আগেও শিবরাম স্কুল এন্ড কলেজে বই বিক্রির ঘটনার মামলায় ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজে বাদি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সাক্ষী প্রমাণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসানুল করিম চাঁদ বলেন, এরকম ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। একজন অফিস সহায়ক কখনো একাই একাজ করতে পারে না। আমার জানা মতে মাজেদুর রহমান একজন সহজ সরল লোক। এঘটনায় মাধ্যমিক কর্মকর্তা নিজেই জড়িত আছে। এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
পুলিশ জানায়, চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নতুন বই সুন্দরগঞ্জ ডিডাবিøউ সরকারি ডিগ্রী কলেজের একটি কক্ষে রাখা হয়। রোববার রাতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মাজেদুর রহমান এসব বই ট্রাকযোগে সুন্দরগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাচার করছিলেন। ট্রাকটি ওইদিন গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ জেলার বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এলাকায় পৌঁছে। এসময় সন্দেহ হলে যমুনা সেতু পশ্চিম থানা পুলিশ ট্রাকটি আটক করে। জিঞ্জাসাবাদে চালক শ্যামল মিয়া ও তাঁর সহকারি রাসেল মিয়া পুলিশকে জানান, বইগুলো সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মাজেদুর রহমানের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।
এরপর যমুনা সেতু পশ্চিম থানা পুলিশ সুন্দরগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ রোববার রাতে মাজেদুরকে সুন্দরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। এনিয়ে সোমবার সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হচ্ছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মাজেদুর রহমান (৩৫), ঢাকার কেরানিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ট্রাকচালক শ্যামল মিয়া (৪৫) ও একই এলাকার বাসিন্দা এবং চালকের সহকারি রাসেল মিয়া (৪২)। মাজেদুর সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।