October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 14th, 2024, 7:47 pm

সুন্দরবন দিবস: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা

আজ সুন্দরবন দিবস। বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলোর অন্যতম সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এটির রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমিরও খ্যাতি। প্রাণ ও প্রকৃতির এক লীলাভূমি এই বনে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী।

ভালোবাসাময় সুন্দরবনকে দেখতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আয়ও।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মূলত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকরা আসেন। সেই সময়ের সুন্দরবনের নদী এবং খালগুলো যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকে।

গত ৫ অর্থ বছরে বেড়েছে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭০ জন। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ জন এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ২৬১ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা।

২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এসেছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৯ জন পর্যটক। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৩ জন এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ৩১৭ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮ টাকা।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এসেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১১ জন পর্যটক। যারমধ্যে দেশি পর্যটক ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯১ জন এবং বিদেশি পর্যটক ৩২০ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৬ টাকা।

২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এসেছেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ জন পর্যটক। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭৪ জন এবং বিদেশি পর্যটক ১ হাজার ১০৩ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮০ টাকা।

এদিকে, সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এসেছে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৪৩ জন পর্যটক। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ১৪৩ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৮০ টাকা।

পরিবেশবিদরা জানান, মানুষের অসচেতনতায় প্রতিনিয়তই হুমকির মুখে পড়ছে এমন সব জীববৈচিত্র্য। এভাবে চলতে থাকলে মানবসভ্যতার বেঁচে থাকার রসদও হারিয়ে যাবে এক সময়।

তারা আরও জানান, ‘ব্যক্তি স্বার্থে প্রাণীকূলের বাস্তুসংস্থানের এই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলাতে বেশ সিদ্ধহস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। সেই সঙ্গে অল্প লাভের আশায় নিজেদের জীবন-জীবিকার দীর্ঘস্থায়ী সম্পদকে অবলীলায় বিসর্জন দিয়ে চলছি। এই ধ্বংসের মুখোমুখি থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে সুন্দরবন দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সবারই প্রাণ আছে। আরও স্মরণ করায় প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে মানবসভ্যতা নয়, বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যেই জীবন ফিরে পায় নতুন রূপ।’

সুন্দরবন ভ্রমণপ্রেমীরা বলেন, বিশ্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। সুন্দরবনের প্রাণ ও প্রকৃতি দেখে আমরা আনন্দিত। সুন্দরবনের ভালোবাসায় প্রতি বছরই আমরা ছুটে আসি। এই বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদেরকে টানে। এখানে অনেক ইকোট্যুরিজম রয়েছে সেখানে আমরা ঘুরেছি। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করছি।

এই বনের গাছপালা, নদী, খাল, বন্যপ্রাণী ও স্থলপায়ী প্রাণী দেখেছি। হরিণ, শূকর, কুমির, বানর, পাখিসহ নানা প্রজাতির প্রাণী আমরা দেখেছি। তবে বাঘের দেখা পাইনি। আগের মতো সব প্রাণী দেখা যায় না। তবুও সুন্দরবনের ভালোবাসার টানে আমাদের ছুটে আসা।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সেক্রেটারি এম. নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, ‘সুন্দরবনের সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছরই পর্যটক বাড়ছে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর সুন্দর জীবনে যাতায়াতের পথ সুগম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারিভাবে পর্যটকদের ভ্রমণে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তবে সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশে সরকারিভাবে আরও সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন।’

খুলনা বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবন একমাত্র বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হচ্ছে সুন্দরবন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের একমাত্র বাঘের আবাসস্থল। বাংলাদেশের আর কোনো বনে কিন্তু এরকম আবাসস্থল নেই। পাশাপাশি এখানে অনেক বিরল বন্যপ্রাণী রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি ধারাবাহিক বনের আবহাওয়া, বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ। সার্বিকভাবে জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও গাছ গাছালি সবই কিন্তু মানুষের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। একটি ভিন্ন আঙ্গিক, বিভিন্ন পরিবেশ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। কাজেই এই অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মানুষ সুন্দরবনে আসছে এবং আসবে।

—–ইউএনবি