July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 2nd, 2023, 8:17 pm

সুপার ওভারে আসালানকার ছক্কা-চারে শ্রীলঙ্কার জয়

অনলাইন ডেস্ক :

ম্যাচ ‘টাই’ করতে শেষ বলে প্রয়োজন ৬ রান। স্ট্রাইকে নিউ জিল্যান্ডের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান ইশ সোধি, যিনি দলে আছেন বোলিংয়ের জন্য। জয় ছিল তাই শ্রীলঙ্কার মুঠোয়। কিন্তু লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার ফুল লেংথ বল ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন ইশ সোধি। ধারাভাষ্যকার তখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, “হি হ্যাজ ডান ইটৃ ইশ সোধি, ইউ রিপার।” গ্যালারিতে দর্শকের তুমুল উল্লাস। সোধি ¯্রফে নির্বিকার ভঙ্গিতে হাঁটা দিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে, যেন কিছুই হয়নি! রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তার ভেলায় ভেসে ম্যাচ ‘টাই’ করতে পারলেও অবশ্য শেষ পর্যন্ত জয়ের ঠিকানায় পৌঁছতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। সুপার ওভারে মাহিশ থিকসানার দুর্দান্ত বোলিং এগিয়ে রাখে শ্রীলঙ্কাকে। মূল ম্যাচের ঝড়ো ফিফটি করা চারিথ আসালানকা এরপর সুপার ওভারেও ছক্কা ও চার মেরে জিতিয়ে দেন দলকে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে জিতে যায় লঙ্কানরা। অকল্যান্ডে রোববার আসালানকা ও কুসাল পেরেরার ফিফটিতে শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে তোলে ১৯৬ রান। রান তাড়ায় ড্যারিল মিচেলের ফিফটির সঙ্গে কয়েকটি কার্যকর ইনিংস আর সোধির শেষ বলের বীরত্বে সেই স্কোরকে স্পর্শ করে কিউইরা। মূল ম্যাচের শেষ ওভারে জয়ের জন্য নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে থাকা রাচিন রবীন্দ্র লং অফে ধরা পড়েন শানাকার প্রথম বলেই। পরের দুই বলেই দুই রান করে নেন নতুন ব্যাটসম্যান সোধি। চতুর্থ বলে বাই থেকে আসে একটি রান, পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নেন হেনরি শিপলি। এরপর শেষ বলে ওই ছক্কা। সুপার ওভারে দারুণ বোলিং করে কেবল ৮ রান দেন থিকসানা। মার্ক চাপম্যান একটি চার মারতে পারেন বটে। তবে জিমি নিশাম ও চাপম্যানকে শেষ পর্যন্ত আউট করে দেন থিকসানা। নিউ জিল্যান্ডের সুপার ওভারের দায়িত্ব পান অ্যাডাম মিল্ন। এই ফাস্ট বোলারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন কুসাল মেন্ডিস। দ্বিতীয় বলে স্লোয়ার ধরতে পেরে ছক্কায় উড়িয়ে দেন আসালানকা। পরের বলে র‌্যাম্প শটে কিপারের ওপর দিয়ে চার মেরে ম্যাচ শেষ, সেটি ছিল আবার নো বলও। নিউ জিল্যান্ড অবশ্য ওয়ানডে সিরিজের মতোই সেরা দলের অন্তত ৫-৬ জনকে পায়নি আইপিএলের কারণে। ইডেন পার্কে ম্যাচের শুরুটাও ছিল নাটকীয়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা ম্যাচের প্রথম বলেই হারায় উইকেট। মিল্নের গতিময় সুইঙ্গিং ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পাথুম নিসানকা। তবে দুর্দান্ত পাল্টা আক্রমণ চালান কুসাল মেন্ডিস ও কুসাল পেরেরা। দ্বিতীয় ওভারে বেন লিস্টারকে টানা তিনটি চার মারেন পেরেরা। তৃতীয় ওভারে মিল্নকে পেয়ে বসেন মেন্ডিস, দুটি করে চার ও ছক্কায় ওভার থেকে আসে ২২ রান। প্রথম বলে উইকেটের পরও ৩ ওভারে রান ওঠে ৪৪! রান ও উইকেট এরপর একসঙ্গে চলতে থাকে। অভিষিক্ত পেসার হেনরি শিপলি নিজের প্রথম ওভারে শর্ট বলে ফেরান মেন্ডিসকে (৯ বলে ২৫)। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ক্রিজে যাওয়ার পরপরই টানা দুটি চার ও ছক্কা মারেন লিস্টারকে। তবে জিমি নিশাম আক্রমণে এসে প্রথম বলেই থামান তাকে। পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কা তোলে ৩ উইকেটে ৭২ রান। চতুর্থ উইকেটে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন কুসাল পেরেরা ও আসালানকা। ৬৮ বলে ১০৩ রান যোগ করেন দুজন। ৪৫ বলে ৫৩ করে অপরাজিত থাকেন পেরেরা। আসালানকার ব্যাট ছিল তুলনায় বেশি উত্তাল। চারের চেয়ে ছক্কায় তার রুচি ছিল বেশি। ২ চার ও ৬টি ছয়ে তিনি ৪১ বলে করেন ৬৭ রান। শেষ ওভারে দুই ছক্কাসহ ১১ বলে ২১ রান করে শ্রীলঙ্কাকে দুইশর কাছে নিয়ে যান ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। ছোট মাঠ আর ব্যাটিং উইকেটে অবশ্য ওই রান খুব নিরাপদ নয়। তবে নিউ জিল্যান্ড জোড়া ধাক্কা খায় শুরুতেই। ইনিংসের প্রথম ওভারেই থিকসানার স্পিনে এলবিডব্লিউ টিম সাইফার্ট। পরের ওভারে বাঁহাতি পেসার দিলশান মাদুশানকার সুইংয়ে বোল্ড অভিষিক্ত চ্যাড বাওয়েস। ৩ রানেই নেই ২ উইকেট। তবে ওই ওভারেই ড্যারিল মিচেলের ছক্কায় প্রতিআক্রমণের শুরু। দেড় বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ৫ চারে ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও খেলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ৩৯ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। পরের জুটিতে মিচেল ও মার্ক চাপম্যান যোগ করেন ৪০ বলে ৬৬ রান। মাদুশানকার এক ওভারে দুজন মিলে রান নেন ২৪। দারুণ জুটির পর দুজন বিদায় নেন পরপর দুই ওভারে। ২৩ বলে ৩৩ করে ফেরেন চাপম্যান। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৬ আসে মিচেলের ব্যাট থেকে। শেষ ৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ৪১ রান, চামিকা করুনারতেœর ওভারে টানা দুই ছক্কা ও এক চারসহ ১৮ রান নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন রাচিন রবীন্দ্র। পরের ওভারে আসে ১০ রান। এরপর সেই শেষ ওভারের নাটকীয়তা এবং শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চের নানা মোড় পেরিয়ে সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কার জয়। সিরিজের পরের ম্যাচ বুধবার ডানেডিনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১৯৬/৫ (নিসানকা ০, কুসাল মেন্ডিস ২৫, কুসাল পেরেরা ৫৩, ধনাঞ্জয়া ১৫, আসালানকা ৬৭, শানাকা ১, হাসারাঙ্গা ২১*; মিল্ন ৪-০-৪২-১, লিস্টার ৪-০-৪৩-১, শিপলি ৪-০-৪৩-১, নিশাম ৪-০-৩০-২, সোধি ৪-০-৩৩-০)।
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৯৬/৮ (বাওয়েস ২, সাইফার্ট ০, ল্যাথাম ২৬, মিচেল ৬৬, চাপম্যান ৩৩, নিশাম ১৯, রবীন্দ্র ২৬, মিল্ন ৩, শিপলি ১, সোধি ১০*; থিকসানা ৪-০-২২-১, মাদুশানকা ৩-০-৪৫-১, মাদুশান ৪-০-৩৭-২, করুনারতেœ ৩-০-৩৬-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩০-২, শানাকা ২-০-২০-২)।
ফল: ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কা জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালানকা।