October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 1st, 2021, 7:30 pm

সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে রেল কর্মীরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রেলওয়ে কর্মীরা আন্দোলনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। মূলত রেলের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা নিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বিগত দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের বেতন-ভাতা প্রদান ছিল স্বতন্ত্র। তবে সম্প্রতি রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আইবাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্থাটির বিভিন্ন ভাতা ভিন্নতর হওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত আইবাসে পরিবহন বিভাগের (রানিং স্টাফ) ‘মাইলেজ’ নামক সুবিধা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর অতিরিক্ত কাজ করে পাওনা ওই সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্মীরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ট্রেনচালক, গার্ড ও টিকিট টেকারদের (টিটি) রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফ বলা হয়। অর্থাৎ ট্রেন চালনায় যুক্ত কর্মীদের রানিং স্টাফ মর্যাদা দেয়া হয়। তারা নির্ধারিত ডিউটির পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় যতো দূরত্ব পর্যন্ত কাজ করে তা মাইলেজ হিসেবে বাড়তি ভাতা পায়। একজন রানিং কর্মচারী রেলওয়ে স্টাবলিশমেন্ট কোড ভলিউম-১-এর চ্যাপ্টার-৫ এবং লোকোমোটিভ অ্যান্ড রানিং শেড ম্যানুয়াল জিআই চ্যাপ্টার-১২ অনুযায়ী ১০০ মাইল বা প্রতি ৮ ঘণ্টা ট্রেন পরিচালনার জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ প্রাপ্য হয়। তাছাড়া সাপ্তাহিক ও সরকারি যে কোনো বন্ধের দিনে ডিউটি করলে হলিডে মাইলেজ প্রাপ্তির বিধানও রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়েতে লোকবল স্বল্পতাসহ ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে রানিং স্টাফদের দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটিও করতে হচ্ছে। ওই হিসাবে একজন রানিং কর্মচারী মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার মাইল পর্যন্ত ট্রেন চালনা করে। কিন্তু বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষিত আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে রানিং কর্মচারীদের মাইলেজ তথ্য ইনপুটের ক্ষেত্রে ৩ হাজার মাইলের বেশি দেয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার অর্ধেক জনবল দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের রানিং স্টাফরা কাজ করেও ব্রিটিশ আমল থেকে চালু থাকা মাইলেজ সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে রেলওয়ের রানিং কর্মচারীরা রেলের দপ্তরে চিঠি দিয়েও সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির সম্প্রতি রানিং কর্মচারীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে পর্যায়ক্রমে আরো কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে রেলের রানিং কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। লোকবলের তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অধিকাংশ চালক, গার্ড কিংবা টিটিদের নির্ধারিত সময়ের তুলনায় বেশি সময় কাজ করতে হয়। এমন অবস্থায় নতুন নিয়মে বেতন-ভাতা সুবিধাবঞ্চিত হলে নির্ধারিত সময়ের পর কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। রেলওয়ে রানিং স্টাফদের অভিযোগ, রেলওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী রানিং স্টাফদের ছুটি, পাস, চিত্তবিনোদন ও অবসরোত্তর গ্র্যাচুইটিতে তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ যোগ করে প্রাপ্যতার বিধান আছে। কিন্তু নতুন নিয়মে রেলওয়ে রানিং কর্মীদের ওসব সুবিধাও থাকছে না। যে কারণে রেলের প্রায় ৩ হাজারের বেশি রানিং স্টাফ কর্মচারী সারা দেশে বৃহত্তর আন্দোলনে নেমেছে।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের সংস্থাপন কোডের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক রানিং স্টাফ এবং লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স প্রদানের প্রস্তাব হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ওই প্রস্তাবে সই করেন। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেলের রানিং স্টাফদের বিশেষ ওই ভাতা প্রদানের প্রস্তাব ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুমোদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা রানিং স্টাফরা মানছে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, রেলের জনবল অস্বাভাবিক কম হওয়ায় রানিং স্টাফরা ১২-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে। কিন্তু আইবাস সফটওয়্যারে মাইলেজ সুবিধা কমিয়ে দেয়ায় কর্মীদের পাশাপাশি রেলওয়েও বড় ধরনের সংকটে পড়বে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতনরা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করে তবে রানিং কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তার জানান, রেলওয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা ৩ হাজার মাইলের বেশি আইবাস সফটওয়্যারে ইনপুট হচ্ছে না। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য রেলের হিসাব শাখাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই রানিং স্টাফদের দাবি ও বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার নিরসন হবে।