October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 29th, 2023, 9:30 pm

সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সরকারকেই সংলাপের পদক্ষেপ নিতে হবে: ড. কামাল

অনলাইন ডেস্ক :

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী দল ও শক্তির সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকেই সংলাপের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ প্রতিপাদ্যে গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে গণফোরাম। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, জাতির জন্য আজকে সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। বাংলাদেশের জন্মের মূল কথা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র কায়েমি স্বার্থে তা আজ বিপন্ন। এজন্য সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ কম দেয় নাই। তবে মানুষ আশা করেছিল দেশের সংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জাঁতি লক্ষ্য করল দেশে গণতন্ত্র না বরং বল তন্ত্র কায়েম হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু এবারও হতাশ হয়। প্রায় ১৫ বছরে দেশবাসী ক্রমহ্রাসমান গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করছে। ২০১৪ সালে ভোটার বিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে।

এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাঁতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। সভাপতিম-লীর সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশে যা চলছে এটি কোনো রাজনীতি না। এটা রাজনীতির নামে প্রহসন। আজকে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নাই। বর্তমান সরকারের আতঙ্ক হচ্ছে ড. ইউনূস এবং ড. কামাল হোসেন। তাই এই সরকার তাদের দেখতে পারে না। যেখানে পুরো পৃথিবীর মানুষ তাদের নিয়ে গর্ব করে সেখানে আমাদের দেশে এই তাদের হেনস্তা করার জন্য সরকার সব চেষ্টাই করছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যায় যেই সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর আছে, সেই সংবিধান বাস্তবায়ন হলে দেশে কোনো সংকট থাকবে না। এ সময় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত সরকার করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৬ টি নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় গণফোরামের পক্ষ থেকে।

১) একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা।
২) গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৩) নির্বাচনকে সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া।
৪) নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে।
৫) বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৬) নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী সকল কর্মকা-ের প্রতিবাদ করতে হবে। তারা বলেন, গণতন্ত্রের প্রতিটি দাবিতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সভাপতি ম-লীর সদস্য আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুব ফোরামের নেতা সাইফুল ইসলাম সজল, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাক আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি ম-লীর সদস্য মোকাব্বির খান, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাড এসএম আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান।