November 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, March 24th, 2023, 9:32 pm

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণে আর্থিক তহবিলে টাকা জমলেও প্রদানের উদ্যোগ নেই

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণে আর্থিক তহবিলে টাকা জমলেও প্রদানের উদ্যোগ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নজির নেই। সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩(১) ধারা অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় হতাহতরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। গত ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর সড়ক বিধিমালা অনুযায়ী, ওই তহবিলে প্রতিটি যানবাহনের কাছ থেকে বার্ষিক চাঁদা নেয়া হচ্ছে। চলতি বছরে ওই তহবিলে শুধু মোটরসাইকেলের নিবন্ধন থেকে এককালীন ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা চাঁদা এসেছে। সরকারি হিসাবেই বছরে ১০ হাজারের বেশি দুর্ঘটনায় হতাহত হলেও তহবিল পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর প্রচার না থাকায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ৬টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি। বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইনে হতাহতের সহায়তায় তহবিলের ব্যবস্থা রাখা হয়। এর ৫৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, তহবিল পরিচালনায় থাকবে ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এ বোর্ডের চেয়ারম্যান। আর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মনোনীত প্রতিনিধিদের জন্য ৮টি সদস্যপদ রয়েছে। সরকার মনোনীত মালিক সংগঠনের একজন, শ্রমিক সংগঠনের একজন এবং একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হবেন। কিন্তু আইন কার্যকরের ৩ বছর পার হলেও ওই ৩ সদস্য মনোনয়ন দেয়নি সরকার। ৫৪(৪) ধারায় ট্রাস্টি বোর্ডকে স্বশাসিত সংস্থা বলা হয়েছে। কিন্তু এর কার্যালয় নেই, নেই কার্যক্রমও। আইনে নিজস্ব জনবলের কথা বলা হলেও তা নিয়োগ হয়নি। সূত্র জানায়, আইনে বলা হয়েছে- সরকারি অনুদান, যানবাহনের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদা এবং এই আইনের অধীনে আদায় করা জরিমানার টাকা তহবিলে জমা হবে। সড়ক পরিবহন বিধিমালার ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার অন্যূন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। অঙ্গহানি এবং পঙ্গুত্বের জন্য ৩ লাখ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা থাকলে ১ লাখ সহায়তা পাবেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি। সরকারের অনুমোদনে সহায়তার পরিমাণ কমবেশি করতে পারবে ট্রাস্টি বোর্ড। বিধিমালার ১৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভারের জন্য মালিককে বছরে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। নতুন নিবন্ধন এবং প্রতিবছর গাড়ির কাগজ হালনাগাদের সময় ওই চাঁদা নেয়া হয়। ইতোমধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে বিআরটিএ তা আদায় শুরু করেছে। মিনিবাস, মিনিট্রাক, পিকআপের বার্ষিক চাঁদা ৭৫০ টাকা। কার, জিপ, মাইক্রোবাসের চাঁদা ৫০০ টাকা। তিন চাকার গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের চাঁদা ৩০০ টাকা। তবে বছর বছর মোটরসাইকেলের ট্যাপ টোকেন এবং ফিটনেস হালনাগাদ করতে না হওয়ায় এই দ্বিচক্রযান থেকে বছরে এককালীন ১ হাজার টাকা চাঁদা নেয়া হচ্ছে। সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৮। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৯টি। চলতি বছরে নিবন্ধিত ৬১ হাজার ২টি মোটরসাইকেলের কাছ থেকে ৬ কোটি ১০ লাখ ২ হাজার টাকা তহবিলে চাঁদা এসেছে। বছরে ৫ লাখ নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন করা হয়। ওই হিসাবে মোটরসাইকেল থেকে বছরে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা আসবে। বর্তমানে যেসব ট্রাক, বাস, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভার রয়েছে, তা থেকে চাঁদা আসবে ৪৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তিন চাকার ও অন্যান্য শ্রেণির গাড়ি থেকে সাড়ে ১৩ কোটি। প্রাইভেটকার থেকে বছরে মিলবে ২০ কোটি। তবে সব গাড়ি প্রতিবছর কাগজ হালনাগাদ করে না। অনেক গাড়ি বিকল হয়ে গেছে, তার হিসাব বিআরটিএর কাছে নেই। তার পরও অন্তত বছরে তহবিলে ১৫০ কোটি আসবে। সূত্র আরো জানায়, বিধিমালায় বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হবে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে অনুসন্ধান কমিটি। সহায়তার আবেদনকারী আপিলও করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের জনবল না থাকায় কে করবে অনুসন্ধান। কারণ যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটবে, আপাতত সেখানকার বিআরটিএ কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করবেন। তাছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার সরকারি ও বেসরকারি পরিসংখ্যানে বিরাট তারতম্য রয়েছে। পুলিশের বরাতে বিআরটিএ জানিয়েছে, ২০২২ সালে ৫ হাজার ২০০ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে সড়কে ৬ হাজার ৭৪৯ দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের মৃর্তু হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য, ৭ হাজার ৭১৩ জনের প্রাণ গেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর অভিযোগ, সব দুর্ঘটনা ও মৃত্যু পুলিশের খাতায় উঠছে না। ফলে দুর্ঘটনার তথ্য নথিবদ্ধ না হলে কীভাবে হতাহতরা ক্ষতিপূরণ পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক পরিবহন আইনে ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গের জরিমানা ও সাজা অনেক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সড়কে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। নিবন্ধনবিহীন বা নিবন্ধন স্থগিত হওয়া গাড়ি চালানোর সাজা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাস জেল। কিন্তু এমন লাখো গাড়িগ সড়কে দিব্যি চলছে। পুলিশ বা নিয়ন্ত্রণকারী কোনো সংস্থাই ধরেনি। এদিকে ক্ষতিপূরণ তহবিল প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, তহবিলের আকার বাড়বে। প্রাথমিকভাবে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৫০ কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে। তা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বিআরটিএ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। আর তহবিলের অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরপর নিয়োগ শুরু হবে। বিধিমালা অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের ৩০ দিনের মধ্যে সভা হয়েছে। অর্থাৎ বোর্ড গঠিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৬টি ক্ষতিপূরণের আবেদন এসেছে, যেগুলো তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। হতাহতের ঘটনা সত্য হলে ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পাবেন। তবে এখনো কেউ পাননি।