নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের হাইটেক পার্কগুলোতে আশানুরূপ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। যদিও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ হাইটেক শিল্পের বিকাশে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টার, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। খাতটিতে এখন পর্যন্ত কিছু দেশী বিনিয়োগ হলেও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। গত দেড় দশকের বেশি সময়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মাত্র ১৮ কোটি ডলার বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। যদিও সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ওই খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে নিট বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ১৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৫৮ লাখ ডলার, ২০২১ সালে ১ কোটি ৪৪ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিদেশী বিনিয়োগ আসে। আর দেশে ৯২টি তথ্যপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ)।
বিএইচটিপিএর অধীনে বর্তমানে হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারসহ মোট ৯২টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আইসিটি খাতের বৃহৎ পরিসরের উৎপাদন হাব হিসেবেই গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকেই ওসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৮৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া আরো ১০টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১২৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাইটেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব পার্কে খুব সামান্য পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটিতে বড় পরিসরে সাতটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান আইওটি ডিভাইস, দুটি প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল ফাইবার ও দুটি প্রতিষ্ঠান সেলফোন তৈরি করছে। এর মধ্যে চীনভিত্তিক ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড পার্কটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে জায়গা বরাদ্দ নেয়। বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করেনি ওরিক্স বায়োটেক।
এদিকে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশী অনেক বড় কোম্পানি এদেশে অ্যাসেম্বল করছে। স্যামসাংয়ের মোবাইল এখন বাংলাদেশে অ্যাসেম্বল হচ্ছে। কয়েকদিন আগে সৌদি আরবের একটা দল পরিদর্শন করে গেছে, তারাও এখানে বিনিয়োগ করবে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরো বিনিয়োগ আসবে। তবে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না, তার কারণ এখনো ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। তবে যশোরের সফটওয়্যার পার্ক ভালোভাবেই চলছে। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে যুবসমাজ খুব ভালো কাজ করছে।
এ ছাড়া সিলেটের আইটি পার্কে র্যাংগস গ্রুপও বিশাল কার্যক্রম শুরু করেছে। একটা ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে গেছে, অদূরভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, প্রযুক্তি জ্ঞানে সীমাবদ্ধতা, দক্ষ জনশক্তি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রযুক্তি খাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন হচ্ছে না। বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি ও বিশ্বের সঙ্গে চাহিদায় তাল মেলাতে না পারা। ব্যবসায়িক মডেলের মধ্যে পরবর্তী ২০ বছর পরও চাহিদা থাকবে এমন পরিকল্পনা দেখাতে হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পরই যদি কোনো পণ্য অকেজো হয়ে যায়, তাহলে মানুষ কেন বিনিয়োগ করবে। উদ্যোক্তারা বিজনেস প্রবৃদ্ধি মডেল দেখাতে পারছে না।
অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি পরিকল্পনায় ভুল হচ্ছে। বিদেশীদের চাহিদা কিংবা ১০ বছর পর কোন পণ্যের চাহিদা বাড়বে তা চিন্তা করা হচ্ছে না। শিক্ষিত স্নাতকদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেই। সর্বোপরি বাইরের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। এ খাতে যারা কাজ করছেন তারা যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। সেজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব কম টাকায় এখানে কাজ করতে হয়।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন জানান, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ প্রতিনিয়তই বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট করেছি। ওটার কারণে নতুন নতুন স্টার্টআপ আসছে এবং ওই স্টার্টআপগুলোতে বিদেশীরা বিনিয়োগ করবে। এটার প্রতিফলন শিগগিরই দেখা যাবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি