November 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 24th, 2022, 9:03 pm

হানিফ পরিবহনের দুই মালিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উচ্চ আদালতের ভুয়া আদেশনামা তৈরির ঘটনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ও হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে জালিয়াতি করে হাইকোর্টের নামে ভুয়া আদেশনামা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করার জন্য বলেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। উচ্চ আদালতের ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে এর আগে গত ১৩ নভেম্বর চারজনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তারা হলেন- হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলাম,প্যাটেন্ট-ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের হাজির হতে বলা হয়। আদালতের আদেশে তারা সবাই হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু ভুয়া আদেশ তৈরির কথা কেউ স্বীকার করেননি। এরপর এ বিষয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। জালিয়াতি করে হাইকোর্টের নামে ভুয়া আদেশনামা তৈরির ঘটনায় হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনসহ চারজনকে গত ১৩ নভেম্বর তলব করেছিলেন আদালত। বাকিরা হলেন, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলাম, প্যান্টেন্ট-ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার। তাদের আদালতে ২৪ নভেম্বর উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, আদেশে যে তারিখের কথা বলা হচ্ছে, সেদিন এমন কোনো আদেশ দেননি হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতির নামও ভুল। আদেশে রাষ্ট্রপক্ষের যে আইনজীবীদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা চার বছর আগেই অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ছেড়েছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘হানিফ পরিবহন’ নামটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন আদালত। আদতে এমন কোনো রায় হাইকোর্ট দেননি। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। আর হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি হলেন আনিসুল ইসলাম। পরিবহন ব্যবসায় জড়িত এই দুই কোম্পানি ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই ‘হানিফ’ এর ট্রেডমার্ক নং: ১৭৪৬৭। গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের দুই বিচারপতির নাম উল্লেখ করে একটি জাল আদেশ প্রস্তুত করা হয়। ওই জাল আদেশের রিট আবেদনের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৩২১/২০২২। রিট আবেদনকারী হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেড। বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলামকে। কথিত আদেশে ওই বেঞ্চের সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা বেশ কয়েক বছর আগেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে। জাল আদেশে বলা হয়েছে, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেড যেন ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক তার পরিবহনে ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। গত ১৬ অক্টোবর হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের করা আবেদনটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাল আদেশে। জাল আদেশের একটি ফটোকপি ওই বেঞ্চের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামানের কাছে আসে। এরপরই জালিয়াতির বিষয়টি বেঞ্চের নজরে এনে উপস্থাপন করেন তিনি। ওই জাল আদেশের কপি দেখে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা। আদালত বলেছেন, মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ জাল আদেশ সৃজন করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের প্রতারণা। এ ধরনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বিনষ্ট হয়। এরপরই হাইকোর্ট তলবের পাশাপাশি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, আমাদের হাইকোর্টের এ বেঞ্চের মোশন পাওয়ার ছিল না। শুধু রুল শুনানির এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের আদেশ দিতে হলে মোশন শুনানির এখতিয়ার থাকতে হয়। তিনি বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো চক্র এ আদেশের কপি সৃজন করেছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে হাইকোর্টের নকল শাখার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত কি না, তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।