October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 1st, 2021, 12:28 pm

‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কুমিল্লার মেধাবী ছাত্র মাহাদী জে আকিব(আকিব হোসেন)। সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই নিজ প্রতিষ্ঠানে আজ অনেকটা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন তিনি। কলেজের ৬২তম ব্যাচের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্র আকিব বর্তমানে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আকিবের মাথা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দেয়া হয়েছে। মাথায় মারাত্মক জখম নিয়ে ভর্তি হন চমেক হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর ঠাঁই এখন আইসিইউতে।

তার মাথার ব্যান্ডেজে লেখা আছে ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’। এমন একটি ছবি রবিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

আকিব হোসেন ছাত্রলীগের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা তাকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে ওঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রবিবার রাতে আকিবের জ্ঞান ফেরেনি। তবে জ্ঞান ফিরে আসলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।

জানা যায়, শনিবার হামলার পর গুরুতর আহত হয়ে আকিবকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সেন্টারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিউরো সার্জারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে মাথায় অস্ত্রপচার হয় আকিবের। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অস্ত্রপচারে নেতৃত্ব দেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

অধ্যাপক নোমান খালেদ ছাড়াও মেডিকেল টিমে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, অপারেশন সফল হয়েছে। তবে আকিব গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। সাথে ব্রেইনেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইনজুরিটা খুব ভয়াবহ হওয়ায় এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবুও আমি খুবই আশাবাদী।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানিয়েছেন, আকিবের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আকিবের ব্রেনে অপারেশন করতে হয়েছে। ওর ব্রেনে রক্ত জমে গিয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। ওই রক্তগুলো সরানো হয়েছে। সরানোর পরেও সে আউট অব ডেঞ্জার না। এজন্য তাকে আপাতত ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আকিবের একজন সহপাঠী বলেন, কলেজের মেইন গেইটের কাছে অবস্থান করছিলেন আকিবসহ আরও কয়েকজন। হঠাৎ তারই রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ তাকে’সহ কয়েকজনকে ধাওয়া করে। সাথে থাকা সবাই দ্রুত সরে যেতে পারলেও প্রতিপক্ষ আকিবকে ঘিরে ফেলে। এরপর লোহার চেইন, বোতল এবং ধারালো রামদা দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।মাথা থেঁতলানো অবস্থায় সহপাঠীরা আকিবকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে সে হাসপাতালটির আইসিইওতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এখনও ফেরেনি সংজ্ঞা।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের এ সংঘর্ষে আকিব ছাড়াও মাহফুজুল হক (২৩), নাইমুল ইসলাম (২০) সহ আরও দুজন আহত হন।

এ ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ ব্যাপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)।

এদিকে এই ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কলেজ প্রশাসন শনিবার থেকে মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার জানান, ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে পাচঁ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

—ইউএনবি