অনলাইন ডেস্ক :
করোনার দিনগুলোতে হল ছিল বন্ধ। ফাঁকে ফাঁকে চালু হলেও দর্শক সাড়া আশাব্যঞ্জক ছিল না। তবে সেই চিত্রটা বদলে দিয়েছেন শাকিব খান ও সিয়ামরা। গত রোজার ঈদে ‘গলুই’ ও ‘শান’ দিয়ে হলে ফিরেছিল দর্শক। আশায় বুক বেঁধেছিলেন হল মালিকারা। সিনেমার মানুষেরাও ভাবছিলেন ইন্ডাস্ট্রির মন্দার দিন হয়তো কাটতে চলছে। তবে গত ২০ মে মুক্তি পাওয়া তারকাবহুল ‘পাপ-পুণ্য’ সিনেমা সেই আশায় গুড়েবালি হয়ে ধরা দিয়েছে। অল্প কিছু সিনেমা হলে মুক্তি পেয়ে ছবিটি একেবারেই দর্শক টানতে পারেনি। পায়নি কোনো আলোচনাও। অথচ এই সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর জুটি বেঁধেছিলেন ‘মনপুরা’ ছবির নায়ক চঞ্চল চৌধুরী ও পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম। বক্স অফিসে ‘পাপ-পুণ্য’ ছবির চেয়েও করুণ চিত্র প্রায় ৯০ লাখ টাকায় নির্মিত ‘আগামীকাল’ সিনেমার। নাটক নির্মাণে স্বনামধন্য অঞ্জন আইচ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে এসে প্রথমেই সুপারফ্লপ তকমার স্বাদ পেলেন। গত ১০ জুন মুক্তি পাওয়া ‘বিক্ষোভ’ সিনেমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকেই। ধারণা ছিল তারকাবহুল সিনেমাটি হলে দর্শক টানবে। কলকাতার শ্রাবন্তী ছিলেন সেই প্রত্যাশার স্বপক্ষের বাজি। তবে সেখানেও ব্যর্থতা। বলা চলে কোনো আলোচনাই পায়নি সিনেমাটি। গেল সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘অমানুষ’ ও ‘তালাশ’ সিনেমাও হলে দর্শক টানতে পারছে না। যদিও ছবি দুটি মুক্তি পেয়েছে দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে। মুক্তির দিন থেকেই দেশজুড়ে থেমে থেমে চলছে বৃষ্টি। এমন আবহাওয়া দর্শক আশা করাও মুশকিল। তবে দিনশেষে লোকসান তো গুনতে হচ্ছে হল মালিকদেরই। যার ফলে তাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকেছে বলে দাবি করছেন তারা। ফার্মগেটের আনন্দ হলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দর্শকহীন ফাঁকা পরিবেশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মী জানান, ‘ঈদে কিছু দর্শক পেয়েছিলাম। তারপর থেকেই একেবারে ফাঁকা। দর্শক যে আসলে কি ছবি দেখতে চায় সেটাই বুঝতে পারি না। মালিক তো বিরক্ত। এভাবে লস দিয়ে তো আর ব্যবসা করা যায় না। যারা সিনেমা বানায় তারা তো বিজ্ঞাপন, টিভি-ফেসবুক দিয়া টাকা পায়া যায়। আমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হই।’ একই চিত্র প্রায় সব হলেই। তাই হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে হিন্দি সিনেমাসহ বিদেশে সিনেমা মুক্তির দাবি হল মালিকদের। এই দাবি অবশ্য তাদের দীর্ঘদিনের। কয়েক বার আন্দোলনও করেছেন তারা। আবারও মানসম্মত বাংলা সিনেমা না থাকায় লোকসানের শঙ্কা দেখিয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। গত ১২ মে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে হল মালিকদের এক মতবিনিময় সভায় এ দাবির কথা জানিয়েছিলেন সংগঠনের নেতারা। সেখানে প্রদর্শক সমিতির নেতারা বলেছিলেন, ‘হল মালিকেরা ঋণ নিতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু, ঋণ নিয়ে টাকাটা সুদসহ ফেরত দিতে গেলে সিনেমা চালিয়েই ফেরত দিতে হবে। এখন দেশে যে সিনেমাগুলো হচ্ছে সেগুলো দর্শক দেখতে আসছেন না। হল ব্যবসা কঠিন সময় পার করছে। এই দুঃসময়ে হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’ তবে অনুমতি এখনো মেলেনি। এদিকে সম্প্রতি ঢাকার মধুমিতা হলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে পান ব্যবসায়ীরাও আমাদের চেয়ে ভালো আছে। তাদের বেচাবিক্রি আমাদের চেয়ে বেশি হয়। আমাদের এসির বিল, কর্মচারীর বিলটাও উঠে না টিকিট বিক্রি করে। সিনেমার প্রযোজক তো নানা উপায়ে টাকা পাচ্ছেন। আমরা তো সিনেমা চালিয়ে শুধু লস গুনছি।’ ‘সিনেমা হল বাঁচাতে হলে অবশ্যই হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হবে। তা না হলে আমাদের সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে হবে। দর্শকের অনেক আগ্রহ হিন্দি সিনেমার প্রতি বা ভারতের সিনেমার প্রতি। সেগুলো আমদানি করে চালাতে পারলে হয়তো দর্শক হলে পাওয়া যেত। একবার হলে ফিরলে সেটা অভ্যাস হবে। তখন দেশের সিনেমাগুলোও দর্শক পাবে বলে আমার বিশ্বাস’- যোগ করেন দেশের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল মধুমিতার এমডি।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’