অনলাইন ডেস্ক :
রেকর্ড সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে গত সেপ্টেম্বর ছিল পৃথিবীর এ পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণ সেপ্টেম্বর মাস। এ ছাড়া ২০২৩ সালও এযাবৎকালের উষ্ণতম বছর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা এসব তথ্য জানিয়েছে। কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পৃথিবী পৃষ্ঠে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ০.৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর আগে ২০২০ সালে সবচেয়ে উষ্ণ সেপ্টেম্বর দেখেছিল পৃথিবী। ওই বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং এল নিনোর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্যঃসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাস ছিল ১৯৪০ সালের পর থেকে সবচেয়ে অস্বাভাবিক রকম উষ্ণ। প্রাক-শিল্পযুগের অর্থাৎ ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যকার সেপ্টেম্বরের চেয়ে গত সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা ১.৭৫ ডিগ্রি বেশি ছিল। সি৩এসের পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো বলেন, ‘জলবায়ুর দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সবচেয়ে অবিশ্বাস্য সেপ্টেম্বর পার করেছি। জলবায়ু পরিবর্তন এমন কিছু নয়, যা আজ থেকে ১০ বছর পরে ঘটবে। এটি এরইমধ্যে ঘটছে। ’সি৩এসের উপপরিচালক সামান্থা বার্গেস বলেন, ‘অভূতপূর্ব এই সেপ্টেম্বর আগের রেকর্ডটি বিশাল ব্যবধানে ভেঙে দিয়েছে।’
উষ্ণতম বছর হওয়ার পথে সি৩এস জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের একই সময়ের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যা ২০১৫ সালে হওয়া প্যারিস চুক্তিকে অতিক্রমের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে সমঝোতা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে ওই লক্ষ্যমাত্রাকে অপরিহার্য হিসেবে দেখা হয়। এর আগে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হওয়ার রেকর্ড গড়ে ২০১৬ সাল। ওই বছরেরও প্রথম ৯ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ০.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
এদিকে বিশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি এল নিনোর প্রভাবে আগামী তিন মাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হয়ে উঠতে পারে ২০২৩ সাল। এল নিনো হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উষ্ণ স্রোত, যার প্রভাবে উষ্ণ হয় দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল। প্রতি দুই থেকে সাত বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে বিপুল পরিমাণ তাপ সাগর স্রোতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। এক-দেড় বছর স্থায়ী হওয়া এল নিনোর প্রভাবে স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ কমে যায়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০২৩ সালের শেষে এবং আগামী বছরের শুরুতে এল নিনোর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। সি৩এসের পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে এল নিনোর ভূমিকা রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি যে আরো খারাপ হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বছর মূলত শীতের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইউরোপেও সবচেয়ে উষ্ণ সেপ্টেম্বর অনুভূত হয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছর ইউরোপে সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা ২.৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
এ সময় ইউরোপের অনেক দেশে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে মেরু অঞ্চল বাদে সেপ্টেম্বরে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ২০.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়তে থাকায় চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। গত মাসের ভয়াবহ ঝড় ড্যানিয়েলের উদাহরণ টেনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর প্রভাবেই লিবিয়া ও গ্রিসে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পযুগের শুরু থেকে মানবসৃষ্ট কারণে উৎপাদিত অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশ শোষণ করে নিয়ে আসছিল বিশ্বের মহাসাগরগুলো। তবে উষ্ণতা বেড়ে চলা মহাসাগরের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
জলবায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক বিল ম্যাকগায়ার বলেন, ‘আমাদের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলায় আগামী ৩০ নভেম্বর কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে একত্র হবেন বিশ্বনেতারা। এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পথ খোঁজা এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানি খাতে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনার হওয়ার কথা। সূত্র : এএফপি
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু