October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 10th, 2024, 9:04 pm

২১ দিন ধরে বন্ধ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেবা

ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল বন্যার পানিতে নিচতলা তলিয়ে যাওয়ায় কিছুদিন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ ছিল। পানি কমার পর অন্যান্য সেবা স্বাভাবিক হলেও এখনও বন্ধ রয়েছে হেমোডায়ালাইসিস সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিয়মিত সেবা নিতে আসা রোগীরা।

দীর্ঘ ২১ দিন ধরে বন্ধ হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। শহরের মাত্র ৪টি বেসরকারি ক্লিনিকে সেবাটি চালু থাকলেও সেখানে ব্যয় প্রচুর। ফলে সেই ব্যয় মেটাতে না পেরে জীবন সংকটে অনেক হতদরিদ্র, মধ্য ও নিম্নবিত্ত রোগীরা এখানেই চিকিৎসা সেবা নেন।

ইতোমধ্যে সেবা না পেয়ে ২ জন রোগী মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৫ থেকে ৬ জন রোগী ডায়ালাইসিস নিতে আসলেও বন্ধ থাকায় চলে যাচ্ছেন তারা। তবে কবে চালু হবে তার সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল।

তিনি বলেন, হেমোডায়ালাইসিস ইউনিটের মোটর ও কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় মেরামতের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছি। আসলে সেবা পুনরায় চালু হবে।

তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে হাসপাতালের নিচতলা সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় জরুরি সেবা চালু রেখেছি। স্ক্যান ও ডায়ালাইসিস বিভাগ নিচ তলায় হওয়ায় এখনও সেবা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে সব সেবা কার্যক্রম চালু করা যাবে।

জানা যায়, শুক্রবার ভোরে সুলতানা আক্তার মুন্নী নামে একাডেমি রোডের এক ডায়ালাইসিস রোগী মারা গেছেন। পরশুরামের আরেক রোগী বন্যার কারণে ডায়ালাইসিস করতে না পেরে মারা গেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক রোগী বলেন, সরকারি খরচের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস খরচ ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি।

তিনি বলেন, হাসপাতালের সেবা বন্ধ রাখায় বেসরকারি ক্লিনিকগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভোগান্তি তো রয়েছেই।

তাছাড়া প্রতি রোগী ২২ হাজার টাকা করে ৬ মাসের জন্য হাসপাতালে জমা দিলেও এখন সেবা পাচ্ছি না বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের ফাহিমা আক্তার বিথি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন আমার স্বামী। প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের খরচ বেশি হওয়ায় ফেনী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলছিল।

তিনি আরও বলেন, বন্যার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিস বিভাগের সব যন্ত্রাংশ ওপর তলায় তুলে রোগীদের ছুটি দিয়ে দেন। ২১ দিন পার হলেও এখনও সেবা শুরু হয়নি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনীর ৬টি উপজেলাসহ আশেপাশের খাগড়াছড়ি, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ ৪ জেলার মানুষের একমাত্র ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে ২১০ জন কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন। আর এখন প্রায় ৫০০ আবেদন জমা পড়ে আছে। একজন মারা গেলে সিরিয়াল পাবে অন্যজন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দেব সাহা বলেন, কিডনি রোগীদের গড়ে সপ্তাহে দুইবার রক্ত ডায়ালাইসিস করতে হয়। এটি করা না গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ৬ শয্যা নিয়ে ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরে চাহিদা বাড়ায় ধীরে ধীরে উন্নিত করে ১০ শয্যা করে ৩ শিফটে প্রতিদিন ৩০ জন রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিল।

পাশাপাশি একজন কনসালটেন্টসহ ২ জন মেডিকেল অফিসারের অধীনে ৯ জন নার্স শিফট অনুযায়ী কর্মরত।

—–ইউএনবি