November 7, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 14th, 2024, 3:32 pm

৩৪ বসন্তে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তেত্রিশ বসন্ত পেরিয়ে ৩৪ বসন্তে পদার্পণ করেছে। সিলেটের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩২০ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পদার্থ, রসায়ন ও অর্থনীতি তিনটি বিভাগ নিয়ে শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন অনেক পরিণত, পাশাপাশি দেশে-বিদেশেও পরিচিতি পেয়েছে নানা গুণে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছেন, রাখছেন অনস্বীকার্য অবদান। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও দুটি ইন্সটিটিউটে নয় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

ছোট ছোট টিলা, সবুজায়নে বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাসটি শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনেও রয়েছে খ্যাতি। নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বৃক্ষশোভিত এক কিলো রোড়ের দু’পাশে কৃত্রিম জলাশয় ও নান্দনিক ওয়াকওয়ে এই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে কয়েকগুণ।

পাশাপাশি শোভিত গোলচত্বরের পাশে চোখ জুড়ানো আইআইসিটি ভবন, বঙ্গবন্ধু চত্বর, চেতনা-৭১, ইউনিভার্সিটি সেন্টার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, স্ট্রোল অডিটোরিয়াম ও টিলাগুলো দর্শনার্থীদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে।

এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার, গবেষণা সম্মেলন, প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট, অলিম্পিয়াড, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক, নাটক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্যারিয়ার ভিত্তিক সংগঠনের নিয়মিত কার্যক্রমতো আছেই।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অর্জনের মধ্যে রয়েছে, তারবিহীন বৈদ্যুতিক কার তৈরি, কথা বলা রোবট ‘রিবো’, হাঁটতে সক্ষম রোবট ‘লি’, ক্যান্সার নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, ব্লক চেইন পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট যাচাই, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস, ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ‘মঙ্গল দ্বীপ’ সফটওয়্যার উদ্ভাবন, চালকবিহীন ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একুশে বাংলা কিবোর্ড, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা, এসএমএসে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি, সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, ক্যাম্পাসে অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক, নিজস্ব ডোমেইনে মেইল ইত্যাদি।

বর্তমানে শাবিপ্রবির গ্রাজুয়েটরা বিশ্বের স্বনামধন্য জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেই চলছে।

অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড পুরস্কার’-২০১৭ ‘নাসা স্পেস চ্যালেঞ্জ অ্যাপস’-২০১৮ প্রতিযোগিতায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’-২০২০ অর্জন, এপিএ মূল্যায়নে দেশের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি করণের মতো অনন্য গৌরবতো আছেই।

এছাড়া দেশের শিক্ষা-গবেষণা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা, র‌্যাগিং ও সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাসের দিক দিয়েও অনন্য উচ্চতায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এখন দৃশ্যমান। গবেষণার বাজেট ১০ গুণ বৃদ্ধি করে সাড়ে ৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এই বছর বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে ৪ শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও গবেষণার প্রতি আগ্রহী, তাদের গবেষণার মান অনেক ভালো।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা কোয়ালিটি ও গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত, পড়াশোনার পরিবেশ, গবেষণার প্রতি বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। দেশের মানুষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা প্রত্যাশা করে, আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষা-গবেষণাসহ সকল দিকে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে এ প্রতিষ্ঠান।