October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 30th, 2023, 7:32 pm

৪৬ বছর বয়সে দাখিল পাশ করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবার ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি সমমানের দাখিল পরীক্ষায় পাস করে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন কুড়িগ্রামের মোছা. রহিমা বেগম নামের এক নারী।

তিনি পেশায় একজন ভাতাপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে কর্মরত আছেন।

তার বাবার নাম মো. আছর উদ্দিন। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খলিলগঞ্জ নাজিরা পাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল সরকার মজনুর স্ত্রী।

শুক্রবার ২৮ জুলাই এসএসসি সমমান পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম কাঁঠাল বাড়ি মহিউস সুন্না মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রহিমা বেগম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর পড়তে পারেননি। সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ছেলে মেয়ে দুজনে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন।

মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে এক ছেলে আছে। দীর্ঘ সময় পর মেয়ের ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করার সময় তার মনে আবারও পড়াশোনা করার ইচ্ছা জাগে।

সবশেষে কুড়িগ্রাম কাঁঠাল বাড়ি মহিউস সুন্না মহিলা মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

এ বয়সে পাশ করায় পরিবার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন রহিমা বেগম।

রহিমা বেগম বলেন, ‘আমি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের একজন কর্মচারি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। এবার আমার স্বপ্ন আমি ইন্টারমেডিয়েটও পড়ব। আমার এসএসসি পাস করার পিছনে আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের অবদান রয়েছে। স্যার আমাকে সব সময় উৎসাহিত করতের পড়াশুনা করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণেই আমি এসএসসিটা পাস করতে পেরেছি। আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই কলেজে কাজ করছি। সব স্যাররা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমিও আমার কাজ সবসময় মনোযোগ দিয়ে করি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা দুজনেই এই কলেজ থেকেই মাস্টার্স পাস করেছে।’

রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, ‘মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকরি করার পরও পরীক্ষায় পাস করবে জানতাম না। আমার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ‘রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মচারি। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। এবছর এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬০ অর্জন করেছেন। বয়স বা কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনা মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সব নার/পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যেকোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন এবং তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।’

—-ইউএনবি