October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, May 28th, 2023, 4:32 pm

৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রক্ষা পায়নি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পও

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর :

রংপুরে মাহফুজার রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভাটা থেকে কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মাহফুজার রহমানের প্রতারণার ফাঁদ থেকে রক্ষা পায়নি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পও। এই ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রোববার (২৮ মে) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন আমিনুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী ইটভাটা ব্যবসায়ী। এ সময় বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্কুরণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামে একটি ইটভাটা স্থাপনের মধ্যদিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন নগরীর আরাজী তাজহাট এলাকার বাসিন্দা মাহফুজার রহমান। ইটভাটার ব্যবসার শুরুতে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল ক্রয় করেন। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন মানুষকে কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করা শুরু করেন। অগ্রীম অর্থ গ্রহণের সময় আস্থা অর্জনের কৌশল হিসেবে মাহফুজার রহমান ক্রেতাদের কাউকে চেক, কাউকে স্ট্যাম্পে অর্থপ্রাপ্তির অঙ্গীকারনামা আবার কাউকে ভাটার মানি রিসিট প্রদান করেন। এভাবেই ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মাহফুজার রহমান।
ভুক্তভোগী এই ব্যবসায়ী বলেন, ২০২০ সালে ভাটার মালিকানা শেয়ার বাবদ ২৫ লাখ টাকা দিয়ে আমি তার ভাটা ব্যবসার অংশীদার হই। পরে জানতে পারি তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রীম টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয় জানাজানি হলে মাহফুজার রহমান আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করে পালিয়ে যান মাহফুজার। পরে ওই টাকার সমপরিমাণ ইট আমি তাদের দিয়েছি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, মাহফুজার অন্যের টাকা গ্রহণ করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভাটায় আমার অংশীদারিত্ব থাকায় তার পাওয়ানাদাররা ইট বা টাকা ফেরতের জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এই ঘটনার পর আমি মাহফুজকে ২০২১ সালে আইনি নোটিশ দেই। পাশপাশি জমির মালিকের জমি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করার জন্যও নোটিশ দেই। কিন্তু তাতে তার কোনো সাড়া মেলেনি। পরে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তার পাওনাদার ও জমির মালিকদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিস বৈঠকের আয়োজন করে ভাটা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেই। ২০২১-২২ অর্থ বছরের শেষের দিকে পুনরায় ভাটা চালু করে স্থানীয় পাওনাদারদের প্রায় ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অগ্রিম ইট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৯০ লাখ টাকা এবং আমার জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা দিয়ে পুনরায় ইট উৎপাদন শুরু করি।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ভাটার কার্যক্রম চালাকালে মাহফুজার আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ভাটা বন্ধে আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন। তার এক নিকটাত্মীয় পুলিশ হওয়ায় তার ক্ষমতায় তিনি এসব করছেন। সে কারণে আমি পুলিশ প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, প্রায় ৭ লাখ কাঁচা ইট যার প্রস্তুত খরচ ৩৫ লাখ টাকা। সেসব এখন নষ্টের উপক্রম হয়েছে। এসব নষ্ট হলে পুরোটাই ক্ষতি হবে, এই অবস্থায় আমিসহ ভুক্তভোগী সবাই প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী সৈয়দ গাফফারুল ইসলাম অতুল, আজমল হোসেন খান, আসাদুজ্জামান, দুলাল মিয়া, হায়দার আলী, সাদ্দাম হোসেন, জাকির হোসেন লেবু, হারুল মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মাহাদ হোসেন পিন্টুসহ অন্যান্য পাওনাদার।