অনলাইন ডেস্ক :
কখনও বার্সেলোনার দিকে, কখনও আবার ইন্টার মিলানের পানে-বিরতির পর এভাবেই বারবার মোড় পাল্টে এগিয়ে চলল হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। প্রথমার্ধের দাপুটে বার্সেলোনা খেই হারাল মিনিট বিশেকের জন্য, সেই সুযোগে সমতা টেনে এগিয়ে গেল ইন্টার। স্বাগতিক শিবিরে তখন জেঁকে বসতে শুরু করে ঘোর শঙ্কা। সেখান থেকে দুই দফায় দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে হার এড়াল শাভি এরনান্দেসের দল। কাম্প নউয়ে বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে গেলেও পরে হারের শঙ্কায় পড়ে বার্সেলোনা। তবে রবের্ত লেভানদোভস্কির জোড়া গোলে মূল্যবান একটি পয়েন্ট নিশ্চিত করে তারা। পরতে পরতে রোমাঞ্চ ছড়ানো ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে। দিনের আরেক ম্যাচে ভিক্তোরিয়া প্লাজেনকে ৫-১ গোলে গুঁড়িয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে বায়ার্ন মিউনিখ। ‘জিততেই হবে’-আগের দিন বলেছিলেন বার্সেলোনা কোচ শাভি। সেই লক্ষ্যে শুরুটা তারা বেশ ভালো করে। বিরতির খানিক আগে এগিয়ে যায় উসমান দেম্বেলের গোলে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই তাদের পথ হারানোর শুরু। ১৩ মিনিট নিাে বারেল্লা ও লাউতারো মার্তিনেসের গোলে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। লেভানদোভস্কি সমতা টানার পর রবিন গোসেন্সের গোলে আবারও পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। পরে যোগ করা সময়ে পোলিশ তারকার দ্বিতীয় গোলে হার এড়ায় কাতালান ক্লাবটি। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রক্ষণ উপরে তুলে এনে আক্রমণ শাণানোর পরিকল্পনা নেয় বার্সেলোনা। তাতে প্রতিপক্ষের সীমানায় শুরু থেকে চাপ বাড়ানো দলটি দশম মিনিটে পায় প্রথম সুযোগ। লেভানদোভস্কির হেড গোলমুখে ফেরান ইন্টারের মিডফিল্ডার হেনরিখ মিখিতারিয়ান। রক্ষণভাগ উপরে তুলে আনায় প্রতিপক্ষের পাল্টা-আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ভয় থাকেই। ১৭তম মিনিটে তেমন বিপদেই পড়তে পারতো বার্সেলোনা। তবে এদিন জেকোর কাছ থেকে নেওয়া শট ক্রসবারে বাধা পেলে বেঁচে যায় স্বাগতিকরা। ফিরতি বলে তারপরও সুযোগ ছিল; কিন্তু প্রয়োজনীয় শটটা নিতে পারেনি কেউ। ১০ মিনিট পর দেম্বেলের জোরাল শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ইন্টার গোলরক্ষক। একটু পর আরেকটি সহজ সুযোগ নষ্ট হয় বার্সেলোনার। ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে লেভানদোভস্কি খুঁজে নেন রাফিনিয়াকে। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট ভলি মেরে হতাশ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। বার্সেলোনার গোলের অপেক্ষা ফুরোয় ৪০তম মিনিটে। ডান দিকের কর্নারের কাছ থেকে বাইলাইন ধরে পাস বাড়ান রাফিনিয়া। বক্সে বল ধরে গোলমুখে পাস দেন সের্হি রবের্তো, সেখানে ঠা-া মাথায় টোকায় গোলটা করেন দেম্বেলে। তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো। কিন্তু রাফিনিয়ার দূরের পোস্টে নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগে সমতা টানেন নিকোলো বারেল্লা। আলেস্সান্দ্রো বাস্তোনি ক্রস বাড়ান বক্সে, কী বুঝে দুই হাত উপরে তুলে জেরার্দ পিকে যেন বোঝাতে চাইলেন, কোনো বিপদ নেই। কিন্তু তিনি খেয়ালও করেননি পেছনে ঢুকে পড়েছেন বারেল্লা। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে; বাঁ পায়ের জোরাল শটে গোলটি করেন ইটালিয়ান মিডফিল্ডার। দুই মিনিট পর ফের এগিয়ে যেতে পারতো বার্সেলোনা। তবে পেদ্রির হেড পাস ফাঁকায় পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট ভলি করেন লেভানদোভস্কি। ৫৬তম মিনিটে হাকান কালহানোগলুর প্রচেষ্টা ঠেকান বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। ৬৩তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে ইন্টারকে এগিয়ে নেন মার্তিনেস। প্রথম লেগে দলের নায়ক কালহানোগলুর ক্রস ডি-বক্সে বুক দিয়ে নামিয়ে জোরাল শটে গোলরক্ষকে পরাস্ত করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। বল প্রথমে বাঁ পোস্টে লেগে ডান পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। প্রথমার্ধে আক্রমণে একচেটিয়া আধিপত্য করে গোলের উদ্দেশ্যে ১৫টি শট নেয় বার্সেলোনা, সেই তারাই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০ মিনিটে নিতে পারে মাত্র দুটি শট। বিপরীতে এই সময়ে ইন্টার পাঁচ শট নিয়ে করে দুটি গোল। ফিকে হয়ে যাওয়া জয়ের আশা নতুন করে জাগিয়ে তুলতে ৬৩তম মিনিটে জোড়া পরিবর্তন করেন বার্সেলোনা কোচ। সের্হিও বুসকেতস ও রাফিনিয়াকে তুলে ফ্রেংকি ডি ইয়ং ও আনসু ফাতিকে নামান তিনি। তাতে আবারও ধারাল হয়ে ওঠে তাদের আক্রমণ। সুযোগও আসতে থাকে। কিছুটা সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ৮২তম মিনিটে মিলে যায় গোল। লেভানদোভস্কির দুর্বল শট ডিফেন্ডার স্তেফান ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় জোরাল শট নেন সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ তারকা। প্রতিপক্ষের আরেক জনের পায়ে লেগে দিক পাল্টে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
ফিরমিনো-নুনেস-সালাহর ঝলকে লিভারপুলের উৎসব
৮৯তম মিনিটে গোসেন্সের গোল এবং তাতে পুরো কাম্প নউ যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। এই গোলটিও আসে প্রতি-আক্রমণ থেকে। মার্তিনেসের ডান দিক থেকে বক্সে বাড়ানো ক্রস প্রথম ছোঁয়ায় জোরাল শটে জালে পাঠান জার্মান ডিফেন্ডার। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে লেভানদোভস্কির দ্বিতীয় গোলে আবারও জেগে ওঠে স্বাগতিক সমর্থকরা। এরিক গার্সিয়ার ক্রসে সবার ওপরে লাফিয়ে দারুণ হেডে গোলটি করেন লেভানদোভস্কি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুই ম্যাচ পর গোলের দেখা পেল বার্সেলোনা, দুই ম্যাচ পর জালের দেখা পেলেন লেভানদোভস্কি। কিন্তু মিলল না খুব প্রয়োজনীয় জয়। তাই, অনেক কষ্টে হার এড়ালেও মুখ ভার করেই মাঠ ছাড়তে হলো তাদের। বিপরীতে শেষ মুহূর্তে জয় হাতছাড়া হলেও মূল্যবান একটি পয়েন্ট পাওয়ায় ইন্টার মিলানের খুশিই হওয়ার কথা। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ইন্টারের পয়েন্ট ৭। আর একটি করে জয় ও ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৪। টানা চার জয়ে পরের পর্বের টিকেট নিশ্চিত করা বায়ার্নের পয়েন্ট ১২। ভিক্তোরিয়ার পয়েন্ট শূন্য। এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে নকআউট পর্বে উঠতে পরের দুই ম্যাচে বার্সেলোনার কেবল জিতলেই হবে না, নির্ভর করতে হবে ইন্টারের ম্যাচের ফলের ওপরও। সেরি আর ক্লাবটিকে অবশ্য সেসব কিছু ভাবতে হবে না, নিজেদের কাজটা সারলেই হবে তাদের।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা