May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 9th, 2023, 9:57 pm

অকেজো ও উড্ডয়ন অযোগ্য বিমান নিলামের উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘদিন ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১২টি অকেজো ও উড্ডয়ন অযোগ্য বিমান পড়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দরের উত্তর পাশের জেনারেল্ এভিয়েশন হ্যাঙ্গারের সামনে পার্কিং করা। সারি সারি পড়ে থাকা এসব উড়োজাহাজ বিমানবন্দরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার বার চিঠি দেয়ার পরও উড়োজাহাজ মালিকানা কোম্পানিগুলো কোনো সাড়া দেয়নি। আর কোনো সাড়া না পেয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে বছরখানেক আগে বিমানগুলোর নিলামের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতায় কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ দিয়ে এগুলো আইনি কাঠামোতে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিলামে তোলার একক এখতিয়ার পেয়েছে বেবিচক। এখন দ্রুতই নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার আগেই নিলাম সম্পন্ন করা সম্ভব। অকেজো ওসব বিমান সরিয়ে নেয়া হলে কমপক্ষে ৭/৮টি উড়োজাহাজ এখানে পার্কিং করা সম্ভব হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অকেজো ও উড্ডয়ন অযোগ্য উড়োজাহাজগুলো বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরে পড়ে আছে। এসব উড়োজাহাজের মালিকানা বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। ওসব এয়ারলাইন্স এখন বন্ধ। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে ওসব প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা চিঠি পাঠানো হয়। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে বছরখানেক আগে নিলামের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে ছয় মাসের সময় চান। ছয় মাস পরে তাদের আর কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে দীর্ঘদিন বিমানবন্দরের কার্গো-ভিলেজের বড় জায়গাজুড়ে উড়োজাহাজগুলো পড়ে আছে। পাশাপাশি এসব উড়োজাহাজের পার্কিং এবং সারচার্জ বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে আটশ’ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো যে পরিমাণ জায়গা দখল করে রেখেছে তাতে অনায়াসে ৭/৮টি প্লেন পার্কিং করা যাবে। কিন্তু বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও উড়োজাহাজগুলোর মালিকপক্ষ কোনো সাড়া না দেয়ায় সেগুলো এখন বিমানবন্দরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলোর কারণে বিমানবন্দর বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। কার্গো-ভিলেজ এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে কার্গো প্লেনে মালামাল ওঠানামাও সহজ হতো। তবে এক ডজন উড়োজাহাজ এককভাবে কেউ হয়তো কেনার জন্য আগ্রহী হবে না। হয়তো কয়েকজন মিলে এগুলো নিলামে কিনতে পারে। উড়োজাহাজগুলো নিলাম করতে পারলে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া টাকা উসুল সম্ভব হবে। আর নিলামে কাক্সিক্ষত দাম না পেলে প্রয়োজনে বিমানগুলো কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হবে। যেমন এর আগে বিমানের একটি ডিসি ১০ উড়োজাহাজ নিলামে কেজি ধরে বিক্রি করা হয়েছিল। সেগুলো নিয়ে ঢাকার ধোলাইখালে বিক্রি করেছিল যিনি নিলাম পেয়েছিলেন। তবে এখানে কয়েকটি উড্ডয়নযোগ্য উড়োজাহাজ রয়ে গেছে। যেগুলো মেরামত করে হয়তো ওড়ানো যেতে পারে।

সূত্র আরো জানায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৮টি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ এখন বিমানবন্দরের উত্তর পাশে পার্কিং করা। সেগুলোর কয়েকটিতে মরিচা পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব প্লেনের পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৬০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বেবিচকের। ২০১২ সালে জিএমজি এয়ারলাইন্স তাদের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে। এরপর আর কখনো ওড়েনি। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে বকেয়ার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় রিজেন্ট। এর বাইরে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ কর্তৃপক্ষের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বকেয়া ১৯০ কোটি টাকা। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বিমানগুলোর রেজিস্ট্রেশন আগেই বাতিল করেছে বেবিচক।

এরপর বিমানবন্দর থেকে প্লেন সরিয়ে নিতে দফায় দফায় নোটিস দেওয়া হয়েছে। বছরখানেক আগেও একবার বকেয়া আদায়ে প্লেনগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। সেই সময় পার হলেও তাদের দেখা নেই। এসব বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, উড়োজাহাজগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিমানবন্দরে পড়ে আছে। সরিয়ে নিতে বেবিচকের পক্ষ থেকে অনেকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো জবাবও দেয়নি, সরিয়েও নেয়নি। সেজন্য এখন সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াফত করে দ্রুত নিলামের কার্যক্রম চলছে।