নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীতে কেমিক্যাল গোডাউনে একাধিক অগ্নিকান্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তারপরও রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানো যাচ্ছে না। ঢাকার একাধিক কেমিক্যাল গোডাউনে বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ডের পর সেখান থেকে গোডাউন সরিয়ে নিতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হলেও তা কেউ মানছে না।এমনকি পুরান ঢাকা থেকে কয়েক হাজার কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। মূলত রাজধানীর আবাসিক এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন মালিকদের নানা অজুহাত আর একগুঁয়েমিতেই ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন সরানো যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক পরিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুরান ঢাকার অনেক আবাসিক ভবনের নিচতলার পার্কিং স্পেস রাসায়নিক গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি কিছু বাড়িতে রাসায়নিক পণ্যের কারখানাও আছে। ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ওসব গুদাম থেকে কেমিক্যাল আনা নেয়া করছে। কেমিক্যাল ব্যবসায় আড়াই হাজার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে ওই বিষয়েও কোনো তদারকি নেই। এ সুযোগে কর্তৃপক্ষ-গুদাম মালিক কেউই আইন মানছে না। অথচ কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ফলে একদিকে যেমন অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গাজীপুরে কেমিক্যাল পল্লীতে ৫২টি কেমিক্যাল গোডাউনের কাজ শেষ হলেও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে সেখানে যাচ্ছে না। আর ওই গোডাউনগুলোতে রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম এ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোইলসহ ভয়ঙ্কর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। ফলে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কেমিক্যালের মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে। ওসব রাসায়নিক সামান্য আগুনের স্পর্শ পেলেই ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। বিগত কয়েক বছরে রাসায়নিক সংশ্লিষ্ট কারণে রাজধানীতে যতোগুলো অগ্নিকান্ড ঘটেছে, তার সবকটিই পুরান ঢাকায় ঘটেছে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেমিক্যাল রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সেখান নতুন জায়গায় যেতে ব্যবসায়ীদের অনেক খরচ হবে এবং সেখানে গেলেও খরচ বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা কেমিক্যাল পল্লীর গোডাউনগুলোতে সকল সুযোগ-সুবিধা চান।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১০ সালের কেমিক্যাল গোডাউন অগ্নিকা-ে নিমতলী ট্র্যাজিডিতে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তারপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই এলাকা থেকে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাস্তবে সেখান থেকে এখনো একটি কারখানাও সরেনি। বিগত ২০১৯ সালে আবার চুড়িহাট্টা এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে এবং ৭১টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে। পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আরেকটি কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ৪ জন নিহত হয়েছে। অতিসম্প্রতি বনানী একটি ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই ভবনে ট্রফি, ক্রেস্ট তৈরির দাহ্য পদার্থ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত রাজধানীতে কেমিক্যাল গোডাউনে ছোটখাটো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকান্ডের পরপরই একাধিক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওসব কমিটি আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও বেশ কিছু সুপারিশ সরকারের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে পৌঁছায়। কিন্তু ওসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। পাশাপাশি কারখানা সরাতে কমিটি গঠিত হলেও সরে না গোডাউন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময়ে পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকান্ডের পর ওসব স্থান থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অন্যত্র সরিয়ে নিতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকে অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো ওসব কেমিক্যাল গোডাউন নিজ অবস্থানেই রয়েছে এবং প্রায়ই অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। আর ওসব গুদাম ও কারখানার অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ ভাগই অবৈধ। মাত্র দুই ভাগ গোডাউনের অনুমোদন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস চাইলেও ওসব গোডাউন উচ্ছেদ করতে পারে না। উচ্ছেদ করতে হলে পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন ও বিস্ফোরক পরিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কামাল আজাদ জানান, পুরান ঢাকায় বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদিত (পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের) কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আর যেখানে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নেই, সেখানে পরিদফতরের অভিযান বা ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ারও থাকে না।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ