অনলাইন ডেস্ক :
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি জলমগ্ন আগ্নেয়গিরির বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ছাই ও পরবর্তীতে সৃষ্ট সুনামিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপপুঞ্জ টোঙ্গার পরিস্থিতি এক সপ্তাহ পরও স্বাভাবিক হয়নি। দেশটিতে এখনও আগ্নেয় ছাই ও সুনামিতে সৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজ চলছে।
শনিবার (২২ জানুয়ারী) দেশটির রাজধানী নুকু’য়ালোফায় মানি সার্ভিসগুলো ফের চালু করার সম্ভব হয়, স্থানীয় বাসিন্দারা লাইন ধরে সীমিত সময়ের জন্য চালু থাকা এ সেবা নেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। টোঙ্গার সরকার জানিয়েছে, পানীয় জলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার একটি টিএম ইতোমধ্যেই বাসিন্দাদের মধ্যে ৬০ হাজার লিটার পানি বিতরণ করেছে। ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট আছে, নিউজিল্যান্ড নৌবাহিনীর এমন একটি জাহাজ গত শুক্রবার দেশটিতে পৌঁছেছে। টোঙ্গার বন্দরে অবস্থানরত জাহাজটি সাগরের পানি নেওয়া শুরু করেছে, এটি দৈনিক ৭০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করতে পারবে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের এ দ্বীপপুঞ্জটিতে সুনামির সময় ১৫ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। এতে বাইরের দিকের যে দ্বীপগুলোর বাসিন্দারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তাদের মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে আনা হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে টোঙ্গার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর; এর কারণ হিসেবে ওই দ্বীপগুলোতে খাবার ও পানির অভাবের কথা বলেছে তারা।
তারা আরও জানিয়েছে, মহাসাগরের পানিতে ভাসতে থাকা আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত ছাই ও অন্যান্য বস্তুর কারণে ছোট জাহাজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও আপাতত বন্ধ থাকায় এতে দ্বীপগুলোর মধ্যে যোগাযোগ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আগ্নেয় ছাই ও সুনামিতে জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর স্যাটেলাইট ও রেডিও লিঙ্কস সীমিত থাকায় আন্তঃদ্বীপগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ‘বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ’ হয়ে আছে বলে বিবৃতিতে বলেছে তারা। হা’য়াপাই দ্বীপপুঞ্জে সুনামির আঘাতে নিহত একজন নারী ও একজন পুরুষকে এরমধ্যে কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা তিন জন বলে জানানো হয়েছে। সুনামিতে নমুকা দ্বীপের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ধ্বংস হওয়ায় সেখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। শনিবার (২২ জানুয়ারী) কয়েক ঘণ্টার জন্য আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবা ফের চালু করা সম্ভব হয়েছিল বলে সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি জানান, লোকজনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এর মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও ব্রিটেন থেকে রওনা হওয়া আরও কয়েকটি ত্রাণবাহী জাহাজ টোঙ্গার পথে রয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে দুটি ফ্লাইট আসার পর শনিবার(২২ জানুয়ারী) জাপান ও নিউ জিল্যান্ড থেকে আরও দুটি ত্রাণবাহী ফ্লাইট এসে হাজির হয়েছে। ত্রাণকর্মীসহ বাইরে থেকে আসা সবার জন্য কঠোর কোভিড-১৯ নীতিমালা ঘোষণা করেছে টোঙ্গার সরকার। দেশটিতে প্রবেশ করতে তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে তিন সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকতে হবে। ত্রাণ সরবরাহ সংস্পর্শবিহীন হতে হবে আর ত্রাণের চালান বিমানবন্দরে আসার পর ৭২ ঘণ্টা কোয়ারেন্টিনে রাখার পর টোঙ্গার কর্তৃপক্ষ সেগুলো বিতরণ করবে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার একটি ফ্লাইটের একজন ক্রু-র করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর আসার পর টোঙ্গার পথে থাকা ফ্লাইটটি মাঝপথ থেকে ব্রিসবেনে ফিরে যায়। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে টোঙ্গায় এ পর্যন্ত মাত্র একজন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে দ্বীপপুঞ্জটি মূলত কোভিড-১৯ মুক্ত আছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু