November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, November 5th, 2021, 9:46 pm

অঘোষিত ধর্মঘটে সারাদেশ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ রাজধানী

ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করায় সব রুটে গণপরিবহন বন্ধ। ছবিটি শুক্রবার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে তোলা।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহনে ধর্মঘটের ঘোষণা ছিল আগে থেকেই। যাত্রী পরিবহন নিয়ে সরাসরি কোনো ঘোষণা না থাকলেও ইঙ্গিত ছিল যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকবে। বাস্তবে ঘটেছে সেটিই। গণপরিবহন চলছে না রাজধানী ঢাকায়। তাতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে সকাল থেকেই। মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনালেই গিয়ে দেখা গেছে, কোনো বাসই ছেড়ে যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবর বলছে, সেসব জেলা থেকেও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ঘোষণা না থাকলেও কার্যত সারাদেশেই চলছে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন তেমন চোখে পড়েনি। বিআরটিসি’র দুয়েকটি বাস ঢাকার সড়কে দেখা গেলেও যাত্রীর চাপে সেগুলোর অবস্থা ছিল সঙ্গীন। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কাজে বের হওয়া রাজধানীবাসী পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এ সুযোগে ঢাকার রাস্তায় রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার ভাড়াও এক লাফে বেড়ে গেছে। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালকদেরও সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। তাদেরও অন্যদিনের তুলনায় বাড়তি ভাড়া চাইতে গেছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার নির্ধারিত দিন ছিল শুক্রবার (৫ নভেম্বর)। এ ছাড়া সরকারি বেশ কয়েকটি দফতরের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখও রয়েছে। এসব পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরীক্ষার্থীরাও। সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাউন্টারগুলো ফাঁকা। যাত্রীরা এদিক-সেদিক দাঁড়িয়ে আছেন।

পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে যাত্রীরা। আমিনবাজার ব্রীজ দিয়ে অনেকে রিক্সা ও পিকআপে গন্তব্য যাচ্ছে। ছবিটি শুক্রবার তোলা।

সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকাল থেকে কোনো বাস এই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি। ফলে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য যেসব যাত্রী মহাখালী টার্মিনালে গিয়েছিলেন, তারা সবাই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। খিলগাঁও থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মহাখালী এসেছিলেন ইমরান। গন্তব্য ময়মনসিংহ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলাম। আজ বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। এখন এসে দেখছি কোনো বাসই নাকি ছাড়বে না। কবে ছাড়বে, সে বিষয়েও কিছু বলছে না। এখন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আবার আত্মীয়ের বাসায় ফিরে যেতে হবে। বাস ছাড়বে না, এটা আগে থেকে জানালে কালই বাড়ি চলে যেতে পারতাম। এখন তো বিপদে পড়ে যাব।’ তার মতো আরও অনেক যাত্রীই এই টার্মিনালে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকলেও কাউন্টার মাস্টারসহ পরিবহন কোম্পানির কর্মীরা আশপাশেই ছিলেন। তারা বলছিলেন, হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে মালিকরা বাস ছাড়তে রাজি নন। বাধ্য হয়েই তারা কাউন্টার বন্ধ করে বসে আছেন। জানতে চাইলে মহাখালী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া বলেন, পরশু রাতে সরকার হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাস চলেছে। কিন্তু প্রতিটি ট্রিপে তেলের দাম বাবদ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে খরচ বেশি হয়েছে। অনেক মালিকই শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেননি। তাই মালিকরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে আমাদের চালক-হেলপারদের কিছু বলার নেই। আমরা প্রস্তুত আছি। মালিকরা বললেই আমরা বাস নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। গাবতলী টার্মিনালেও কাউন্টারগুলো বন্ধ করে বসে রয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সেখানকার কয়েকজন জানালেন, ভোরের দিকে দুয়েকটি বাস বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। বিশেষ করে গাবতলী থেকে পাটুরিয়াগামী সেলফি, দ্রুতগামীসহ কয়েকটি বাস ছেড়ে গিয়েছিল। তারা ১০০ টাকা ভাড়া ১৫০ টাকা করে নিয়েছে যাত্রীদের কাছ থেকে। তবে বেলা বাড়ার পর এই টার্মিনাল থেকেও আর কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, ‘বাস চালানো বা না চালানোর সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষের। তবে আমরা যত দূর শুনেছি, তেলের দামের সঙ্গে যাত্রী ভাড়া সমন্বয় করা না হলে বাস চলবে না। হয় তেলের দাম কমাতে হবে অথবা যাত্রী ভাড়া বাড়াতে হবে।

ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করায় শুক্রবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরবিহন মালকি-শ্রমকিরা। ফলে যানবাহন বন্ধ থাকায় রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় সারিবদ্ধ কাভার্টভ্যান।

তা না হলে বাস চলবে না।’ এই ধর্মঘট কতদিন চলবে, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাননি জানালেও এই পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, ভাড়া না বাড়লে বা তেলের দাম না কমলে সপ্তাহখানেকও চলতে পারে ধর্মঘট। এদিকে, ডিজেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে গত বৃহস্পতিবার রাতেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে (বিআরটিএ) পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের একটি বৈঠক করার কথা ছিল। তবে সেই বৈঠকটি হয়নি। জানা গেছে, আগামী রোববার বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, ওই বৈঠকের আগে বাস চলবে নাÑ এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। ঢাকার বাইরে থেকেও পাওয়া যাচ্ছে একই তথ্য। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া জানিয়েছেন, তারা অন্তত আজ শনিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখবেন বাস চলাচল। আজ শনিবার পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানিয়েছেন সিলেট, নাটোর, যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলার বাস মালিকরা। তবে আরও অনেক জেলা থেকেই বাস মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের এই অঘোষিত ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য। এর আগে, বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর গত বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দেয়, শুক্রবার (৫ নভেম্বর) থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ জানিয়েছিলেন, গণপরিবহন বন্ধের বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে কার্যত পণ্যের পাশাপাশি যাত্রীপরিবহনও বন্ধ হয়ে গেছে।