নিজস্ব প্রতিবেদক:
সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনাতেই কয়েকগুণ বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিনই গড়ে ৬৪ জন প্রাণ হারাচ্ছে আর আহত হচ্ছে ১৫০ জনেরও বেশি। প্রতিবছর গড়ে ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে এবং আহত হচ্ছে আরো কয়েকগুণ। মূলত অতিরিক্ত গতিসীমাই সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত গতিসম্পন্ন একটি গাড়ি অন্য আরেকটি গতিসম্পন্ন গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তাছাড়া লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, সচেতনতার অভাব, অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালানো, যান্ত্রিক ত্রুটিসম্পন্ন গাড়ি রাস্তায় নামানোসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে দেশে যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। তার মধ্যে ১৮ লাখ চালকের লাইসেন্স আছে। বাকি ১৫ লাখ যানবাহন লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে চলছে। তাছাড়া শ্রমিক সংগঠনের চাহিদা মেনে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই পেশাদার চালকদের মধ্যে অন্তত ২ লাখ চালক লাইসেন্স পেয়েছে। অথচ দুর্ঘটনায় দায়ি ব্যক্তিদের শাস্তির পরিমাণ খুবই অপ্রতুল।
সূত্র জানায়, সড়ক দুর্ঘটনার কারণসংক্রান্ত পুলিশের প্রতিবেদন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) বিশ্লেষণ করে থাকে। বিগত ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ করে এআরআই’র অভিমত, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতির কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ।
এদিকে সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন নির্দিষ্ট গতিসীমা বা নিয়ন্ত্রিত গতি, যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক নিয়োগ, নিরাপদ ও প্রশস্ত রাস্তা, জনসচেতনতা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ এবং জনসাধারণ যাতে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা। পাশাপাশি লাইসেন্স প্রদানে দুর্নীতি বন্ধ করা, চালকের বেতন ও কাজের সময় নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রী-পথচারীদের ক্ষেত্রেও ট্রাফিক আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সড়ক আইন কার্যকর জরুরি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু তা অপ্রতুল। তবে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ওই চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, দুর্ঘটনা কমানোর কার্যকর কোন চেষ্টা নেই। বিশেষ করে সড়কে দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই। পুলিশ মাঝেমধ্যে গাড়ি থামিয়ে শুধু মাদক আছে কিনা তা দেখলেও বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা বাড়ছেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির বাজেট বাড়ানো, গবেষণা, সভা-সেমিনার, প্রচার মাধ্যমে গণসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক