April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 2nd, 2022, 9:35 pm

অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমলাদের কাজ মূল্যায়নের উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমলাদের কাজ মূল্যায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ওই লক্ষ্যে কাজ করছে কারিগরি এবং পরিবীক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী নামে দুটি কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইসিটি, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই কমিটি গঠন করেছে। আর কারিগরি কাজ শেষে আমলাদের কাজ মূল্যায়নের জন্য অত্যাধুনিক সফটওয়্যারটি চালু করা হবে। বর্তমানে আমলাদের কাজের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা নেই। অপরিকল্পিতভাবে যে যার মতো কাজ করছে। কিন্তু সফটওয়্যার পদ্ধতি চালু হলে বছরের শুরুতেই কাজের একটি পরিকল্পনা থাকবে। আর ওই পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই কাজের তদারকি করবেন। সেক্ষেত্রে মূল্যায়ন নম্বরে ভিন্ন মত থাকলে কমবেশি করা যাবে। শুরুতে গ্রেড-১ থেকে নবম পর্যন্ত কর্মকর্তাদের অনলাইনে মূল্যায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনলাইনে মূল্যায়ন করবে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমলাদের কর্মকৃতি মূল্যায়নে সফটওয়্যারে শুরুতেই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (পিএমআইএস) সব তথ্য যুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পিএমআইএস যুক্ত করা হবে। চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় ও দুদকের মামলাসহ সব ধরনের তথ্য থাকবে। তাতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং অদক্ষতা বিবেচনা করা সহজ হবে। যার যে ধরনের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা থাকবে, তাকে সে বিষয়ে পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া হবে। তাছাড়া কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের জন্য সফটওয়্যারে পরিকল্পিত কাজের জন্য থাকবে ৬০ নম্বর। বর্তমানে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (এসিআর) একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও কার্যসম্পাদনের ২৫টি সূচকে ১০০ নম্বর আছে। অনলাইন পদ্ধতিতে ১০টি সূচকে নম্বর থাকবে ৪০। বছরের শুরুতেই ৬০ নম্বরের কর্মপরিকল্পনা কর্মকর্তাদের ঠিক করতে হবে। তারপর বছর শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের মূল্যায়ন নিজেই করতে পারবেন। আর ১০ সূচকের ৪০ নম্বর মূল্যায়ন করবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের দক্ষতা অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে তাও মূল্যায়ন করা হবে। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করলে জবাবদিহি করতে হবে।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকার পরিচালনার মূল জায়গা। আর ওই মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে জনস্বার্থে মানবসম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা। সেজন্যই সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দক্ষতা মূল্যায়নে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাতে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতিসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। প্রত্যেকের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হবে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মকৃতি মূল্যায়ন পদ্ধতি আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ (সিপিটি) অনু বিভাগ। গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (জিইএমএস) শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি দুটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একজন কর্মসূচি পরিচালক ও দু’জন উপ-কর্মসূচি পরিচালকও নিয়োগ করা হয়েছে। সম্প্রতি সিপিটি অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের পরিবীক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী কমিটি গঠন করা হয়। কারিগরি কমিটি সফটওয়্যারের কারিগরি বিষয়গুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, গবেষণা ও সংস্কারমূলক কর্মকা-ের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সফটওয়্যার ব্যবহার ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ মডিউল প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণ আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শ দেবে। আর পরিবীক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী কমিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ, অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং সার্বিক পরামর্শ, নীতিনির্ধারণী বিষয় ও যে কোনো বিষয় পরিবর্তনের অনুমোদন করতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে কর্মকর্তাদের এসিআর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় পাঁচ বছর পরেই খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। কোনো কর্মকর্তার ১০ বছরের এসিআর নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে তার সততা ও দক্ষতাসহ বিভিন্ন সূচকের নম্বর খুঁজে পাওয়া যায় না। সফটওয়্যার পদ্ধতি চালু হলে কম্পিউটারে ক্লিক করে পুরো ক্যারিয়ারের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা যাবে। তাছাড়া বর্তমান পদ্ধতিতে কোনো আমলা পদোন্নতিবঞ্চিত হলে জানতে পারেন না তিনি কেন বঞ্চিত হলেন। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে আমলারা তাদের নিজের ত্রুটি জানতে পারবেন। প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করাও সহজ হবে।
এদিকে সরকারি মানবসম্পদের ব্যবহার ভিন্ন হওয়ায় কর্মকর্তাদের বিশেষায়িত করে গড়ে তুলতে গুচ্ছায়ন পদ্ধতিতে পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হবে। এভাবে সরকার খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ তৈরি করবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে চৌকস কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে পদায়ন করা হবে। বৈদেশিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং শিক্ষাজীবনে সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি/ বিভাগ/ ক্লাসপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ফলাফলকেও বিবেচনায় আনা হবে।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার অনেক আগেই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমলাদের এসিআর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার এখন ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি দেশেরও উপকার হবে। তবে এর সঙ্গে দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ লব্ধজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের পথরেখা তৈরি করতে হবে।
এ ব্যাপারে সফটওয়্যার তৈরির কারিগরি কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সিপি অধিশাখা) ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামান জানান, সফটওয়্যার তৈরির কারিগরি কাজ চলছে। এটা কার্যকর হলে প্রত্যেক কর্মকর্তার বার্ষিক কার্যক্রম স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। তাতে এসডিজি অর্জনও সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বিদ্যমান বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (এসিআর) কর্মকর্তাদের কর্মকৃতি মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য তা আরো বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে সফটওয়্যার চালু করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি ও পদায়ন পাবেন।