March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 2nd, 2021, 7:43 pm

অনলাইনে বোমা বানানো শিখে পুলিশের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ২

নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ছবিটি সোমবার তোলা।

নিজস্ব প্রতিবেদক :

অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নব্য জেএমবির বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর জাহিদ হাসান ওরফে বোমা জাহিদ ওরফে রাজু ওরফে ফোরকান ভাই। সম্প্রতি জাহিদের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেফতাকৃতরা জাহিদের কাছ থেকে অনলাইনে বোমা বানানো শিখতো বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান। সোমবার (২রা আগষ্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ১৬ মে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির এই দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম লাল রঙের বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ, তিনটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, একসেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ৪ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ১০টি ক্রিসমাস বাল্ব, দুটি কালো রংয়ের ইলেকট্রিক টেপ, একটি আইইডি তৈরির ম্যানুয়াল, হামলায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অফলাইনে তাদের (জঙ্গিদের) তৎপরতা নেই, তবে তারা অনলাইনে সক্রিয়। যদিও এজন্য নগরবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো ঘটনা ঘটার আগেই জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তার করছে সিটিটিসি। তিনি বলেন, গত ১১ জুলাই সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াত টিম যৌথ অভিযানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকা হতে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে। মামুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর শফিকুর ও খালিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশে গত ১৬ মে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। ত্রুটিপূর্ণ রিমোটের কারণে কয়েক বার চেষ্টা করেও বোমাটি বিস্ফোরণে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং রিমোটটি রাস্তার পার্শ্বে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে। তিনি বলেন, মাহাদী হাসান জনের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার শফিকুর রহমান নব্য জেএমবির সামরিক শাখার ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। গ্রেপ্তার শফিকুর ও খালিদ হাসান বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও ভিডিও দেখে বোমা তৈরির অনলাইন প্রশিক্ষক ফোরকানের তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে হামলায় ব্যবহৃত আইইডিটি তৈরি করে। গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে নাশকতা ও পুলিশকে হামলার লক্ষ্যে একত্র হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে। বোমা জাহিদ ওরফে জাহিদ ওরফে ফোরকান ভাই সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ফোরকান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বোমা তৈরির দক্ষতা রয়েছে। অনলাইনে প্রশিক্ষক হিসেবে ফোরকান গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে আইইডিটি তৈরি করেছিল যা পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে। ফোরকানকে গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরাও তৎপর। অনলাইনভিত্তিক তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেই নগরবাসীর উদ্বিগ্ন বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আমরা সম্প্রতি অনেক শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জঙ্গিরা এখন হুমকি নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল মান্নান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদুজ্জামান।
পাঁচ দিন করে রিমান্ড: এদিকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নব্য জেএমবির দুই সদস্যের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যাদের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে তারা হলেন- শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান। সোমবার (২রা আগষ্ট) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।