নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজে ঢাকার বাতাসে দূষণ বাড়ছে। ফলে ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাতাস দূষণ রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অনেকটাই নির্বিকার। বায়ুুদূষণের কারণে প্রতি বছর শুধু ঢাকাতেই ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। তার বাইরে সারা দেশে ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ বায়দূষণ থেকে অসুস্থতাজনিত রোগে মারা যায়। পরিবেশবিদদের মতে, বাতাসে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পাশাপাশি ইটভাটা ও শিল্প-কারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পরিবেশবিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্ট্যামফোর্ড বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বিগত ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমান সূচক নিয়ে গবেষণা করেছে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, গত ৬ বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বাতাস পেয়েছে। আর ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা বিশ্বে প্রথম হয়েছে। অথচ ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বাতাসের মান খারাপ অবস্থায় পৌঁছালে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে গণসতর্কতা জারি করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এমন কোনো সতর্কতা এখনো জারি করা হয়নি।
সূত্র জানায়, রাজধানীর আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এলাকাগুলোতে দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তার কারণ রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। আর ওসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। তাছাড়া রাতে সড়কে সিটি করপোরেশনের ঝাড়ু দেয়ায় বাতাসে ধুলাবালি উড়তে থাকে। বায়ুদূষণ রোধে বিগত ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই), ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা দেয়। তার মধ্যে ছিল বর্জ্য বহনকারী যানবাহন, নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণ কাজের স্থানগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তাছাড়া বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার রাস্তায় পানি ছিটানো। বিগত ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা। সেখানে প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে বস্তুকণা ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। তারপরের অবস্থানেই ছিল শাহবাগ।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও ডিএসসিসির মতিঝিল, ফকিরাপুল, যাত্রাবাড়ি, জুরাইনসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কোথাও নির্মাণসামগ্রী ও কাজের স্থান ঢেকে রাখা হয়নি। অনেক এলাকায় খোলা ট্রাকে বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে। যদিও নগরের প্রধান সড়কগুলোতে পানি ছিটাতে ১০টি কনটেইনারবাহী ট্রাক রয়েছে। ওসব ট্রাক দিয়ে নগরের প্রধান সড়কে পানি ছিটানো হয়। তাছাড়া সড়ক থেকে ধুলাবালি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তুলে নিতেও দুটি যন্ত্র রয়েছে। তবে সেগুলো খুবই কম ব্যবহার করা হয়।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনে ঢাকায় বাতাস দূষণের বিষয়টি স্বীকার করে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, দুভার্গ্যবশত ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কাজ করা হচ্ছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরো পার্ক প্রতিষ্ঠা, প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি, হাঁটার জায়গা সৃষ্টি করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
একই বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, বাতাস দূষণের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি সড়ক ঝাড়ু দেয়া। তার বাইরে সড়কে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী রাখা বন্ধ, জলাধার সংরক্ষণসহ বেশকিছু কাজ করছে ডিএনসিসি। ওসব কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করা যায় সামনের বছরগুলোতে ঢাকার বাতাসে দূষণের পরিমাণ কমে আসবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার জানান, নগরে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা এবং শিল্প-কারখানার ধোঁয়া। ওই দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক