April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 14th, 2022, 9:33 pm

অনিয়মে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বাকি তিন-চতুর্থাংশ কাজ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মেয়াদ শেষ হলেও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকল্পের তিন-চতুর্থাংশ কাজ শেষ হয়নি। বরং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনিয়মের মচ্ছব চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণাধীন ২০০টি ভবনের একটিও হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। অথচ নতুন ভবনের জন্য থেমে নেই আসবাবসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা। আর তা করতে গিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৮ সালে ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্প’ শুরু হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ২২ দশমিক ১১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ওই প্রকল্পের অধীনে ২০০ সরকারি কলেজে অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আইসিটি ও বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সরবরাহ, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ভবনও হস্তান্তর করা সম্ভব না হলেও ২০০ কলেজের জন্য কেনা হয়েছে ২০০ ডিজিটাল ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। অর্থাৎ মূল কাজ না এগোলেও কেনাকাটা অব্যাহত আছে। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে নিষেধ করা হলেও ওই প্রকল্প থেকে তা মানা হয়নি। আর এখন অব্যবহৃত থেকে ক্যামেরাগুলোর ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই ক্যামেরাগুলো কার্যক্ষমতাও হারানোর শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প অফিসের জন্য কয়েক কোটি টাকায় কেনা হয়েছে দামি দামি আসবাব, বিভিন্ন ধরনের অফিস সরঞ্জামসহ অত্যাধুনিক গাড়ি। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২ বছর বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকল্পের অধীনে কলেজের আসবাব সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তাতে প্রমিক্সো লিমিটেড প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা দিয়ে প্রথম দরদাতা হয়। পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২ কোটি ৯১ লাখ টাকায় দ্বিতীয় দরদাতা হয় এবং ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে তৃতীয় দরদাতা হয় আখতার ফার্নিশার্স লিমিটেড। আর ৩ কোটি ৪৮ লাখে চতুর্থ দরদাতা হয় হাতিল কমপে¬ক্স লিমিটেড। কিন্তু অদৃশ্য কারণে চতুর্থ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেয়া হয়। তার আগে গত বছরের শেষ দিকে আসবাব সরবরাহের আরেকটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে প্রথম দরদাতা প্রতিষ্ঠান হয় ডিজাইনটেক ইন্টেরিয়র অ্যান্ড ফার্নিশার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি দর দেয় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রমিক্সো লিমিটেড এক কোটি ৬২ লাখ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতা হয়। ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দর দিয়ে তৃতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান হয় আরএফএল প¬াস্টিকস লিমিটেড আর অটবি লিমিটেড ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিয়ে চতুর্থ দরদাতা হয়। কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডি ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা দর দিয়ে পঞ্চম হয়। ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দর দিয়ে ষষ্ঠ হয় অরনেট প্লাস। ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা দর দিয়ে সপ্তম হয় হাতিল কমপে¬ক্স লিমিটেড। কিন্তু সপ্তম দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। পরপর দুটি দরপত্রে সপ্তম ও চতুর্থ দরদাতাকে কাজ দেয়ায় ওই প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আবার দুটি দরপত্রে একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় সেই অভিযোগ আরো জোরালো হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা অনিয়মের অভিযোগে এর আগে ওই প্রকল্পের প্রথম পরিচালককে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাহার করে নেয়। নতুন প্রকল্প পরিচালক যোগদানের পরই শিক্ষার ওই বৃহৎ প্রকল্পের কেনাকাটা জোরেশোরে শুরু হয়েছে। তবে আগের পরিচালককে যেসব কারণে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, বর্তমান পরিচালকও এখন একই ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এদিকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত যে কোনো কেনাকাটায়ই কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কমপক্ষে ৬ শতাংশ কমিশন দিয়ে থাকে। যা মূলত প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তার পকেটে যায়। এবারের দরপত্রে প্রথম বা দ্বিতীয় দরদাতাদের কাছ থেকে ওই ৬ শতাংশ অর্থও নেয়া হয়। কিন্তু দুটি বড় কোম্পানি থাকার পরও চতুর্থ দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়। এর পেছনে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম থাকাটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. খন্দকার মুজাহিদুল হক জানান, কাজ দেয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক নেই। এবারের দরপত্রে চাহিদামতো সব কাগজপত্র আপলোড না করায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতাকে কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। চতুর্থ দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। পিপিআর অনুসরণ করেই কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।