November 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 30th, 2022, 9:43 pm

অনিয়ম-দুর্নীতে রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে শঙ্কা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন বারুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। তাছাড়া ভৌত অবকাঠামোগত অগ্রগতি ৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলমান প্রকল্পটির আওতায় ৫টি বিভাগের ৩৪টি জেলায় ২ হাজার ১১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের কথা বলা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৫২ কিলোমিটার বা ৩৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়কের মধ্যে এখন পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে ১১০ কিলোমিটার সড়ক। যা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করা মোট ইউনিয়ন সড়কের ২২ শতাংশ। ওই সঙ্গে ২৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কে বৃক্ষরোপণের সংস্থান থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন অডিট না হওয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই প্রকল্পটির এমন হাল। আদৌ প্রকল্পটি কবে নাগাদ শেষ হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নে অবৈধ স্থাপনা, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বাউন্ডারি ওয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি এবং সড়কের গাছ অপসারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সরু সড়কে গাড়ি ঘুরানোর জায়গার অভাব, বাজার অংশে কাজ বাস্তবায়ন করা কঠিন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের অভাব এবং উন্নয়ন করা সড়কগুলোর জমির মালিকানা না থাকা। একই সঙ্গে সংকীর্ণ ও কম প্রশস্ত সড়ক অন্যতম দুর্বল দিক। ইলেকট্রিক পোল ও রাস্তার পাশের গাছ অপসারণে দেরি হওয়ায় সড়কের কাজ যথাসময়ে শেষ করার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া একই প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন দুর্গম উপজেলায় একাধিক সড়কের কাজ করা। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে কাজের গতি মন্থর হওয়া। আকস্মিক বন্যা, সড়কগুলো নিয়মিত মেরামত না করা এবং বর্ষা মৌসুমে সড়ক মাটি নরম থাকায় যে কোনো সময় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর কোভিড-১৯ মহামারি এবং নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ নাও হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪ বছর কেটে গেলেও মাত্র ৮টি জেলায় অডিট হয়েছে। আর মোট ৩৪টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখনো প্রায় ৭৭ শতাংশ জেলায় কোনো অডিটই হয়নি। আর যেসব জেলায় অডিট হয়েছে সেগুলোর প্রতিটিতেই পাওয়া গেছে আপত্তি। তাছাড়া প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। যদিও প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য কাগজপত্রাদি অডিট অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। ক্রয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য বাকি জেলাগুলোতে অডিট কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে পরিচালনা জরুরি।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় অডিট হওয়াটা জরুরি। তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। এ প্রকল্পে মাত্র ৮টি জেলায় অডিট হয়েছে। এখন বেশিরভাগ জেলাই বাকি আছে। অডিট না করাটাও একটা অনিয়ম। এলজিইডির প্রকল্পে এ রকম সমস্যা হয়। যদিও তারা অনেক সময় বলে এলজিইডির অভ্যন্তরীণ অডিটের সঙ্গে চলমান প্রকল্পেরও অডিট হয়ে যায়। কিন্তু তা ঠিক নয়। কেননা প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা অডিটের তথ্য থাকা উচিত। যথাসময়ে অডিট না হওয়ায় দুর্নীতি উৎসাহিত হয়। যে উদ্দেশ্যে অডিট করা হয় তা যদি সময়মতো না হয় তাহলে পূরণ হয় না। দেরি হলে কোনো অনিয়ম বা অসঙ্গতি থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকে না। এতোগুলো জেলায় ৪ বছরের এতগুলো জেলায় অডিট না হওয়াটা প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অন্যতম বড় দুর্বলতা। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান জানান, শুধু প্রতিবেদন তৈরিই আইএমইডির কাজ নয়। সেগুলো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে যেসব ক্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার ফলোআপ করা হবে।