নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনুমতি না নিয়েই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা রেলপথে বিপুলসংখ্যক লেভেল ক্রসিং গড়ে তুলেছে। আর ওসব লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে মোট ৩ হাজার ১৯ কিলোমিটার রেলপথ আছে। রেলের ওই নেটওয়ার্কে অনুমতি না নিয়ে ১ হাজার ৩২১টি লেভেল ক্রসিং গড়ে তোলা হয়েছে। আর অনুমোদনহীন ওসব লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। রেল কোড অনুযায়ী পূর্বানুমোদন ছাড়া লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা নিষিদ্ধ হলেও তার তোয়াক্কা করা হয় না। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলপথে ট্রেন নিরাপদ চলাচলের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং ট্রেন চলাচলের সময় সংশ্লিষ্ট স্থানে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। রেল চলাচলে কেউ যাতে বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য গেট তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তা দেয়া শুধু রেলওয়ের দায়িত্ব নয়, যারা ক্রসিং করে রাস্তা তৈরি করবে তাদের ওপরও বর্তায়। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এককভাবে রেলওয়ের ওপর দায় চাপানো হয়। বর্তমান সরকার রেল যোগাযোগ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বিভিন্ন সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। স্থানীয় সরকার কিংবা সড়ক বিভাগ লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে কোনো রাস্তা নির্মাণের অনুমতি নিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সূত্র জানায়, ট্রেন কোথাও বাধাগ্রস্ত না হয়ে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নয়। বরং ওই দায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ কিংবা স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর বর্তায়। সেজন্য সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের যেসব ব্যস্ততম সড়কের লেভেল ক্রসিংগুলোয় আন্ডারপাস কিংবা ওভারপাস করা প্রয়োজন। আর কম গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংগুলোয় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
এদিকে সওজ অধিদপ্তরের দাবি, রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে মাত্র ১২টি অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদিত। যদি সড়ক বিভাগকে জনবল নিয়োগ করে লেভেল ক্রসিংগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় সেক্ষেত্রে রেলওয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী ট্রাফিক ডাটা ১০ হাজারের অধিক হলে রেলওয়ে ওভারপাস করার পক্ষে মতামত দেয়া হয় এবং ইতোমধ্যে বেশকিছু লেভেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু ওভারপাস নির্ধাণাধীন রয়েছে। নতুন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের ক্ষেত্রে নকশা সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নকশা সংশোধন করা হলে রাস্তা সোজা হবে। ফলে একই রাস্তায় বারবার রেলওয়ে ক্রসিংয়ের প্রবণতা কমবে।
অন্যদিকে একই বিষয়ে এলজিইডি সংশ্লিষ্টরা জানান, এলজিইডির রাস্তায় অরক্ষিত ও বিপজ্জনক লেভেল ক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এলজিইডি অত্যন্ত আন্তরিক। এলজিইডির যেসব রাস্তা রেললাইন ক্রস করেছে, সেখানে রেল গেট নির্মাণ ও গুমটিঘর নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়নের জন্য এলজিইডি সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এলজিইডির পক্ষ থেকে রেল দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিভিন্ন জেলায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে স্পিড ব্রেকার ও রোড মার্কিং স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে অতিদ্রুত রেলগেট ও গুমটিঘর নির্মাণের ড্রইং-ডিজাইন সরবরাহ, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের হালনাগাদ তালিকা করার জন্য মাঠপর্যায়ে ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণসহ সব ধরনের সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়েছে। রেলওয়ের ওই সহায়তা পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিপিপি তৈরি করে কাজ বাস্তবায়ন করা এলজিইডির পক্ষে সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েতে অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে এলজিইডির নির্মিত ৪৫৮টি। অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলোর জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই ওসব অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং নির্মাণকারী সংস্থাকে নিরাপদ রেল চলাচল এবং যাত্রী ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রেলওয়ে আইন, ১৮৯০ এবং রেলওয়ে কোড অনুসারে রেলওয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়া ওই ধরনের রাস্তা নির্মাণ করা প্রচলিত আইন পরিপন্থী।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক