অনলাইন ডেস্ক :
পুরস্কার বিতরণ শেষে ট্রফি নিয়ে তখন দলীয় ছবি তোলার পালা। হাসি মুখে ছবির জন্য পোজ দিলেন ক্রিকেটাররা। সেখানে একটু ব্যতিক্রম দেখা গেল সাকিব আল হাসানকে। অন্যান্যের গায়ে অনুশীলন পোশাক থাকলেও ফটোসেশনে এলেন মূল জার্সি গায়ে, তার পায়ে ব্যাটিং প্যাড। ম্যাচ শেষ হতেই আবার কেন ব্যাটিংয়ের সাজে তিনি, বোঝা গেল কিছুক্ষণ পর। সতীর্থরা ড্রেসিং রুমে ফেরার পর ব্যাট, হেলমেট নিয়ে সেন্টার উইকেটে নেমে গেলেন সাকিব। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প ও বিসিবির এক টিমবয়কে সঙ্গে নিয়ে দুই দফায় তিনি প্রায় ঘণ্টাখানেক করলেন অনুশীলন।
বিভিন্ন স্টান্স ও হেড পজিশনে ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন নিজের ব্যাটিং। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে বল হাতে বরাবরের মতোই সপ্রতিভ ছিলেন সাকিব। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ওভারপ্রতি ৬ রানের কম খরচায় তার শিকার ৫ উইকেট। কিন্তু ব্যাটিংয়ে তিনি পারেননি সেরা ছন্দে ফিরতে। দুই ম্যাচেই তার ব্যাটিংয়ে ছিল অস্বস্তির ছাপ। গত শুক্রবার চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ব্রায়ান বেনেটের সোজা যাওয়া ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন সাকিব। শেষ ম্যাচে রোববার বাঁহাতি স্পিনার শন উইলিয়ামসের বলে একটি ছক্কা মারলেও বাকি সময় ক্রিজে তেমন সাবলীল ছিলেন না সাকিব। শেষ পর্যন্ত ফ্লিক করার চেষ্টায় ব্যাটের সামনের কানায় লেগে ক্যাচ আউট হন তিনি।
দুই ম্যাচ মিলিয়ে করেন ২০ বলে ২২ রান। গত বছর থেকে বয়ে চলা চোখের সমস্যার প্রভাব এই সিরিজেও ফুটে উঠেছে। দুটি ম্যাচেই তার ব্যাটিং স্টান্স ও হেড পজিশন ছিল নড়বড়ে। অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা হয়তো অনুভব করেছেন সাকিব নিজেই। পুরস্কার বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই ব্যাটিং অনুশীলনে নেমে যান তিনি। প্রথম দফায় প্রায় ৪০ মিনিট থ্রো ডাউনে ব্যাটিং করেন। নেট সেশন শুরুর আগে শান্তর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় তাকে। কয়েকটি ভিন্ন স্টান্সে ব্যাটিং করতেও দেখা যায় তাকে। প্রথম দফায় লম্বা সময় ব্যাট করে ১৫ মিনিট বিরতির নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ১৫ মিনিটের বেশি অনুশীলন করেন তিনি। এবার কখনও সামনের পায়ে বেশি ভর দিয়ে চেষ্টা করেন শট খেলার। কখনও পেছনের পা একই জায়গায় আটকে রেখে খেলেন অফ সাইডের বল।
তবে হেড পজিশন নিয়ে তাকে খুব স্বস্তিতে দেখা যায়নি। চোখের সমস্যার পর থেকেই এই বদলটা দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যা গত বছরের বিশ্বকাপ থেকেই বলে চলেছেন সাকিব। পরে চলতি বছরের শুরুতে বিপিএলে নতুন স্টান্সে ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। যেখানে বারবার ঝুলে যায় তার মাথা। বল ঠিকঠাক দেখার জন্য মাথার অবস্থানও দেখা যায় ভারসাম্যহীন অবস্থায়। এর মধ্যেও অবশ্য কিছু ম্যাচে সফল হন তিনি। বিশেষ করে স্পিনারদের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান করতে দেখা গেছে তাকে। তবে পেসারদের বিপক্ষে বিশেষ করে গতিময় ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে ভুগতে দেখা যায় সাকিবকে।
বিপিএল শেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেন তিনি। সেখানে তিন ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দলে যোগ দেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। দুই ইনিংসে করেন ১৫ ও ৩৬ রান। এরপর জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে না খেলে প্রিমিয়ার লিগে খেলেন ৩টি ম্যাচ। আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে খেলেন ৪৯ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে প্রায় ৫ বছর পর পান সেঞ্চুরির দেখা। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৯ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেন ৭৯ বলে ১০৭ রানের ইনিংস। সেদিন পেসারদের বলে নেন ২৭ রান। আর স্পিনের বিপক্ষে ৫২ বলে করেন ৮২ রান।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে সেই ছন্দ বয়ে আনতে পারেননি তিনি। তবে বাংলাদেশ দলে এটা নিয়ে দুর্ভাবনা নেই বলেই দাবি করলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, সাকিবের ওপর সবটুকু আস্থা তাদের আছে। “তার ব্যাটিং নিয়ে আমাদের দলের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা সবাই জানি তার সামর্থ্য কতটা। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, সামনে যে টুর্নামেন্ট ও সিরিজটা আছে, তিনি ব্যাটিংয়ে দলের হয়ে অবদান রাখবেন।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা