দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতে নতুন পথের আশা জাগিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর চার দিন পর তারা শপথ নিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, আইনজীবী হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ছাত্র সমন্বয়কারী এম নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের (সিএইচটিডিবি) চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, নারী অধিকার কর্মী ফরিদা আক্তার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায়, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, গ্রামীণ টেলিকমের ট্রাস্টি নূরজাহান বেগম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শারমিন মুরশিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় অবতরণের পর ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই হবে তার প্রথম কাজ।
তিনি বলেন, ‘আমার ওপর যদি আপনাদের বিশ্বাস থাকে, আমার ওপর যদি আস্থা থাকে, তাহলে নিশ্চিন্ত থাকুন কেউ আক্রান্ত হবে না। সেটাই হবে আমাদের প্রথম কাজ। আমি যদি এটা করতে না পারি, আপনি যদি আমার কথা না শোনেন, তাহলে আমার এখানে থাকার দরকার নেই। আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি আমার কথা শুনছেন। দেশকে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করুন।’
এসময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ সহিংসতা, সম্পদ নষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ, কিন্তু সবাইকে রক্ষা করাই তাদের কাজ।
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা প্রগতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি আমাদের সদ্য শুরু হওয়া যাত্রার সবচেয়ে বড় শত্রু। আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের অগ্রাধিকার। আইনশৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এগোতে পারছি না।’
যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘দ্বিতীয় বিজয় দিবস’ সৃষ্টি করেছে, তাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক। স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আর কোনো যুবক হাল ছাড়েনি, যার ফলে বিপ্লব ঘটেছিল। এই স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে পৌঁছাতে হবে, অন্যথায় এই স্বাধীনতার কোনো অর্থ নেই; স্বাধীন হওয়া মানে সবার জন্য পরিবর্তন।’
ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হচ্ছে জনগণ যা অর্জন করেছে তা বাস্তবায়ন করা। জনগণ সরকারকে বিশ্বাস করে না, তারা দেখছে দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে। সরকার এরকম হতে পারে না, এটা এমন কিছু হতে হবে যাতে মানুষের বুক ফুলে উঠবে এবং আস্থার জায়গা হবে।
হামলাকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শত্রুদের বুঝতে দিতে হবে। তাদের আইনের হাতে তুলে দাও, তাদের শাস্তি দিতে হবে- মারধর নয়। সেই আস্থা আনতে হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান।
প্যারিস ছাড়ার আগে তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
সামরিক কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের নেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার পর ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ