April 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 27th, 2021, 12:12 pm

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি ক্যামেরা) নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উন্নত দেশের আদলে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই গোটা রাজধানী ঢাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ঢাকার ৫০ থানা এলাকা জুড়ে বসানো হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। আর সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে পুরো রাজধানী ঢাকা নজরদারির আওতায় চলে আসবে। ফলে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। কারণ সিসি ক্যামেরায় আসামির ছবিসহ ভিডিও ধরা পড়বে। তাছাড়া অপরাধ দমন ছাড়াও ক্যামেরা নজরদারিতে বদলে যাবে বিদ্যমান এ্যানালগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও। আর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের বাসভবন এলাকা সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার রাজধানীজুড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই প্রকল্পের নাম ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ১৬ হাজারেরও বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। তার মধ্যে পুলিশ ১৫ হাজার সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করবে। আর গোটা রাজধানী সিসি ক্যামেরার আওতায় এসে গেলে অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা খুবই সহজ ও কার্যকর হবে। এমনকি গভীর রাতে নির্জনস্থানে অপরাধ সংঘটিত হলেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর সিসি ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে ডিজিটাল টহল নিশ্চিত হবে। ফলে রাজধানী শহর থাকবে পুলিশের সার্বক্ষিণ নজরদারিতে। আর ওই ক্যামেরায় চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি থাকায় অপরাধ সংঘটিত করে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারবে না। তাতে অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের খুব সহজেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় শব্দ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থাও থাকবে। রাজধানীর কোথাও কোন শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোলরুমে শব্দের বিস্তারিত তথ্যের সিগন্যাল চলে যাবে। ফলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে পুলিশ দ্রুততম সময়ে তথ্য পাবে। এমনকি কতদূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সঙ্কেত বেজে উঠবে। আর সঙ্গে সঙ্গেই কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত অপেক্ষমাণ পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপসহ আনুষঙ্গিক বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যদিও সিসি ক্যামেরার প্রকল্পের শুরুতে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে কয়েক দফা কাটছাঁট করে বর্তমানে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের জটিলতায় এখনো প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। মন্ত্রণালয় থেকে ক্রেডিট সাপ্লাই পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হলেও পুলিশ সদর দফতর তাতে রাজি নয়। একনেকে প্রকল্পটি পাস হলে পরিচালক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ক্যামেরা স্থাপনের কাজও শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় গোটা রাজধানীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে ঢাকা শহরে ১৬ হাজারেরও বেশি ক্যামেরা বসানো হবে। তার মধ্যে ১৫ হাজার ক্যামেরা শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করবে পুলিশ। বাকি এক হাজারের মতো ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত হবে। তাতে উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে। রাজধানী ঢাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হলে সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বেশকিছু পুলিশিং সুবিধা পাওয়া যাবে। যেমন- রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্পর্শকাতর স্থান, সুউচ্চ ভবন, মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে। তাছাড়া ইংরেজী নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ, পূজা ও শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে পুলিশ উচ্চমাত্রায় নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে পারবে। কোন অঘটন ঘটলে অপরাধী শনাক্ত করা আরো সহজ হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতাও সিসি ক্যামেরার আওতায় চলে আসবে। ফলে বড় ধরনের নাশকতা ও জঙ্গী হামলার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এ প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
এদিকে রাজধানী ঢাকার ট্যাফিক ব্যবস্থা এখনো এনালগ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঢাকার সিগন্যাল বাতিগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন হাত দিয়ে থামানো, চালানোর সিগন্যাল দিচ্ছে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাধ্যমে মামলা করা হলেও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা কমছে না। তাছাড়া প্রভাবশালীদের তদ্বিরের কারণে অনেক সময় ট্রাফিক সার্জেন্টদের আইন প্রয়োগ থেকে পিছু হটতে হয়। আর এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কম নয়। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থায় ওসব প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। কারণ সবকিছুই একটি কেন্দ্রীয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে চলবে। সিসি ক্যামেরায় আইন লঙ্ঘন ধরা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলা হবে। মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্টদের কাছে মামলা সংক্রান্ত বার্তাও চলে যাবে। কারণ প্রকল্পের সঙ্গে বিআরটিএ, মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রাইভেটকার কলিং সিস্টেমসহ বেশ কয়েকটি তথ্যভা-ার সংযুক্ত থাকবে। ফলে আইন লঙ্ঘন করে ফাঁকি দেয়া যাবে না। আর শাস্তি পাওয়াটা নিশ্চিত হবে। ট্রাফিক সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
অন্যদিকে ক্যামেরা প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইমার্জেন্সি সার্ভিস বা ট্রিপল নাইন (৯৯৯) বর্তমানে সারাদেশের নাগরিকদের জন্য ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে সমস্যা সমাধান ও উপকারে আসছে। ফলে তা নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ও নাগরিকবান্ধব হয়ে উঠেছে। সিসি ক্যামেরা প্রকল্পেও ট্রিপল নাইন যুক্ত হবে। আর সিসি ক্যামেরা প্রকল্প ট্রিপল নাইনের সঙ্গে যুক্ত হলে পুলিশ সেবার মান আরো বাড়বে। কোন স্থানে আক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কোনমতে ফোন তুলে একটি চিৎকার বা শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যাবে পুলিশ। বর্তমানে ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগকারীকে তার নাম-ঠিকানাসহ অবস্থানের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয়। সিসি ক্যামেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন হবে না। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য বিশেষ কৌশলের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে নিজস্ব ভৌগোলিক লোকেশন ব্যবস্থা বা পিজিআইএস ব্যবহার করবে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা এখন মেগাসিটি। ২ কোটি জন অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ২৬ হাজার ৬৬১ জন পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশকে ঢাকায় বসবাসরতদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাজধানীতে বিদেশীসহ দেশী ভিআইপিগণের চলাফেরা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্পর্শকাতর স্থানে পাহারা, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। শহরের অলিগলিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হলে কার্যত : রাজধানী ঢাকা প্রায় অপরাধ শূন্য হয়ে পড়বে। তাতে জনগণ সরাসরি উপকৃত হবে।