November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, June 16th, 2023, 8:00 pm

অবশেষে খরা কাটিয়ে মুমিনুলের সেঞ্চুরি

অনলাইন ডেস্ক :

কখনও কখনও কোনো অর্জনের উচ্ছ্বাসের চেয়ে বেশি থাকে স্বস্তি। মুমিনুল হকের এই সেঞ্চুরি যেমন! টেস্ট ক্রিকেটে আগেও ১১টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। আরও বড় প্রতিপক্ষ, কঠিন পরিস্থিতি ও শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলেছেন বড় ইনিংস। কিন্তু এই সেঞ্চুরি হয়তো কখনোই ভুলবেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্যারিয়ারের দীর্ঘতম খরার পর যে শতরানের বর্ষণে সিক্ত হলেন তিনি! মুমিনুলের উদযাপনেও থাকল সেটির রেশ। ইয়ামিন আহমাদজাইয়ের শর্ট বলে দারুণ এক র‌্যাম্প শটে বাউন্ডারিতে পা রাখেন তিনি শতরানে। মাইলফলক ছুঁয়ে ক্রিজে ছোট্ট পায়ে এগিয়ে যান কয়েক পদক্ষেপ। আলতো করে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। একটু পর হেলমেট খুলেও উঁচিয়ে ধরেন বটে।

তবে সেসবে যতটা না ছিল উল্লাস, তার চেয়ে বেশি ছিল বড় এক ভার নেমে যাওয়ার ছাপ। সবশেষ সেঞ্চুরি যখন করেছিলেন, তখনও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক। কোভিডের থাবায় গোটা বিশ্বের মতো ক্রীড়াঙ্গনও অনেক অনেক জড়সড়। সেই ইনিংস তার ক্যারিয়ারের অপ্রাপ্তি ঘোচানো এক সেঞ্চুরি। দেশের বাইরে প্রথমবার স্বাদ পেয়েছিলেন শতরানের। ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে সেই ইনিংসের পর ২৬ মাস হতে চলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন ব্যর্থ হলেন, সেঞ্চুরিবিহীন ইনিংস হলো তখন ২৬টি। অবশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে অবসান হলো তার ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অপেক্ষার। টেস্টের তৃতীয় দিনে শুক্রবার ৬৬১ রানের লিড নিয়ে যখন ইনিংস ঘোষণা করল বাংলাদেশ, মুমিনুল তখন অপরাজিত ১২১ রানে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে বেশ দ্রুত রানও তুলেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ৮৩.৪৪। ১৪৫ বলের ইনিংসে চার মেরেছেন ১২টি, ছক্কা ১টি। সেঞ্চুরি ছাড়া এই ২৬ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল ¯্রফে ৩টি। শ্রীলঙ্কায় ওই শতরানের ৩ ইনিংস পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে খেলেন তিনি ৭০ রানের ইনিংস। আবার ৪ ইনিংস পর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে করেন ৮৮। এরপরই শুরু হয় দুঃসময়ের।

ব্যাটসম্যানদের বাজে সময় আসে অনেক। কিন্তু মুমিনুলকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন ব্যাটিংই ভুলে গেছেন! একপর্যায়ে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি টানা ৯ ইনিংসে! ব্যাট হাতে সেই কালো সময়টা তার নেতৃত্বের অধ্যায়েরও সমাপ্তি ডেকে আনে। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে বাস্তবতা ছিল আসলে, দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। পরে তো গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর একাদশেও জায়গা হারান। তার টেস্ট ক্যারিয়ারও তখন অনিশ্চিত। ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও জায়গা পাননি একাদশে। দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে সুযোগ পান ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেরা সময়ের কিছুটা ঝলক দেখিয়ে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। তবে সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হন। গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসেও পাননি বড় রান। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। এরপর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবার ফেরেন অল্পতে। সব মিলিয়ে দুঃসময়ের মেঘ আবার জমতে শুরু করেছিল।

তবে শেষ পর্যন্ত তা আর ঘনীভূত হতে দিলেন না তিনি। এবার প্রথম ইনিংসে উইকেটে ৪০ মিনিটের অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষে মুমিনুল আউট হয়ে যান ১৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ক্রিজে যান জাকির হাসান ৭১ রানে রান আউট হওয়ার পর। ১৭৩ রানের জুটির পর তখন আফগান বোলাররা এমনিতেই বিপর্যস্ত। লিড ততক্ষণে সাড়ে চারশ হতে চলেছে। ম্যাচের পেক্ষাপটে তাই কোনো চাপই ছিল না। চাপ ছিল তার নিজের। রান পাওয়ার চাপ। এমনিতেই জায়গা হয়ে উঠেছিল নড়বড়ে। এরপর এই ম্যাচেও রান না পেলে তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠত প্রবলভাবেই। মুমিনুলের শুরুটা যদিও খুব সাবলীল ছিল না। তৃতীয় বলে বাউন্ডারির দেখা পান অবশ্য। তবে এরপর কিছুটা জড়তা ছিল। লড়াই করে সেই সময়টা পার করে দেন তিনি। ছন্দ পেয়ে যাওয়ার পর অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

৭ চারে ফিফটি পূরণ করেন ৬৭ বলে। সেখান থেকে শতরানে যেতে বাউন্ডারি মারেন আরও ৫টি, তবে বল লাগে কেবল ৫৬। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মারেন শতরানের পর আমির হামজা হোতাকের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হননি। ব্যাট হাতে মাঠে নামার সময় যে পাহাড় চেপে বসেছিল তার মাথায়, ফেরার সময় তা সরে গেছে নিশ্চিতভাবেই। ক্যারিয়ারের আরেকটি অনিশ্চয়তা আপাতত কেটে গেল। এবার নতুন গতি দেওয়ার পালা!