শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গত ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য বলেন, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের একদিন পর উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষা উপমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান, যারা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান ভিসি।
শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এসময় দীপু মনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ভিসির পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করা হবে, কারণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে ভিসি পদে কাউকে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা রাখেন।
শুক্রবার সিলেটের সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠকে মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি দল শুক্রবার সকালে সিলেটে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
উপাচার্যের অপসারণের দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা এখন নতুন প্রক্টরের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির প্রক্টর মো. আলমগীর কবিরকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি শাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান।
২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি।
২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।
২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন।
এরপর ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রয়ারি) আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম