অনলাইন ডেস্ক :
ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে কার্যকর ঝড়ো ইনিংস খেললেন রিশাদ হোসেন। দলের স্কোর তারপরও অতি সামান্য। রিশাদ এরপর লেগ স্পিনের এমন ভেলকি দেখালেন, ওই ছোট পুঁজিই হয়ে উঠল যথেষ্ট। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে অল্প পুঁজি নিয়েও রোমাঞ্চকর জয় পেল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। জাতীয় দলের সবশেষ দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলার সামর্থ্য দেখিয়েছেন রিশাদ। কিন্তু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পারছিলেন না তেমন কিছু করতে। সবশেষ তিন ইনিংসে তো প্রতিটিতেই আউট হন শূন্য রানে। অবশেষে সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারলেন ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটার। দলের বিপর্যয়ের মধ্যে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৩ রান করেন রিশাদ। পরে লেগ স্পিনে শিকার করেন ৪ উইকেট।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রিশাদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ১৩ রানের জয় দিয়ে সুপার লিগ শুরু করে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। স্রেফ ১৩৮ রানের সংগ্রহ নিয়েও তারা গাজী গ্রুপকে গুটিয়ে দেয় ১২৫ রানে। ম্যান অব দা ম্যাচ তো অবশ্যই রিশাদ। ৩ উইকেট নিয়ে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিও রাখেন বড় অবদান। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পরও শাইনপুকুর জয়ের বিশ্বাসটা পায় শুরুতে সানির হাত ধরেই। গাজী গ্রুপের রান তাড়ায় শুরুতেই আনিসুল ইসলামকে ফেরান তিনি। পঞ্চাশ পূর্ণ হওয়ার পর আউট করে দেন আরেক ওপেনার মেহেদি মারুফকেও। তিনে নেমে সহজাত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন হাবিবুর রহমান। শুরুটা করেন তিনি প্রথম দুই বলের বাউন্ডারিতে। অষ্টম ওভারে দুই চারের পর ছক্কা মারেন গতিময় বোলার নাহিদ রানাকে। ছাড় দেননি তিনি সানিকেও, টানা দুই বলে মারেন ছক্কা।
তবে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানকে এবার ফিফটিতেও যেতে দেননি রিশাদ। তার দ্বিতীয় ওভারে বড় টার্নে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন হাবিবুর। ৪টি করে চার-ছক্কায় ১৯ বলে ৪১ রান করেন তরুণ ব্যাটসম্যান। হাবিবুরের বিদায়ের পর কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি। নিজের পরের ওভারেই প্রিতম কুমারের উইকেট নেন রিশাদ। পরে ২০তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন মইন খান ও সাব্বির হোসেন শিকদার।
একশর আগে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় গাজী গ্রুপ। সাত নম্বরে নামা শেখ পারভেজ রহমান চেষ্টা করেন দলকে এগিয়ে নেওয়ার। নতুন স্পেলে ফিরে ২২ রান করা পারভেজকে আউট করেন আরাফাত সানি। পরে চার বলের মধ্যে শেষ ২ উইকেট নিয়ে শাইনপুকুরকে জিতিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। চলতি লিগে এখন পর্যন্ত ৯ ইনিংসে রিশাদের শিকার ২৩ উইকেট। এই ম্যাচ দিয়ে উইকেট শিকারিদের তালিকায় দুই নম্বরে উঠে গেছেন তিনি। ওভারপ্রতি তার রান খরচের হার স্রেফ ৩.৯৭।
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তানজিদ হাসান ছাড়া শাইনপুকুরের আর কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে তানজিদ একাই ছুঁতে পারেন দুই অঙ্ক। স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ বলে ৪২ রান করেন তানজিদ। হুসনা হাবিবের বল দূর থেকে খেলার চেষ্টায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। অন্যান্যের ব্যর্থতায় স্রেফ ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে শাইনপুকুর। এরপর রিশাদের ঝড়। হুসনা হাবিবের বলে তিনি মারেন ৩টি ছক্কা। বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার বল সোজা পাঠান সীমানার ওপারে। হুসনা হাবিবকে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তিনি। শেষ দিকে ২টি ছক্কা মারেন মুকিদুল ইসলাম। যা পরে দলের জন্য মহামূল্যবান প্রমাণিত হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৩৪.৫ ওভারে ১৩৮ (জিসান ৭, তানজিদ ৪২, খালিদ ৯, মার্শাল ৮, ইরফান ৯, আকবর ৪, সানি ৬, রিশাদ ৩৩, মুরাদ ০, মুকিদুল ১৩, নাহিদ ৪*; রুয়েল ৫-০-২৬-১, পারভেজ ৭-২-১৬-১, মইন ৬-০-২৫-০, গাফফার ৬-১-২১-৩, হুসনা হাবিব ৮-১-২৮-৩, আওলাদ ২.৫-০-২২-২)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২৭.৪ ওভারে ১২৫ (মেহেদি ২৩, আনিসুল ৪, হাবিবুর ৪৪, সাব্বির ১২, প্রিতম ১, মইন ৫, পারভেজ ২২, গাফফার ৪, রুয়েল ২, হুসনা হাবিব ১, আওলাদ ১*; নাহিদ ৬-০-২৬-১, সানি ৭-০-৪৫-৩, মুরাদ ৬.৪-০-২১-২, রিশাদ ৮-০-৩১-৪)
ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ১৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা