জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব পড়েছে সিলেট অঞ্চলেও। গত ২ দিন কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়ে নগরজীবন। নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় জলবদ্ধতা। কয়েকটি স্থানে জমে থাকা পানি ঢুকে গেছে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, বেড়েছে দুর্ভোগ।
আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সিলেটসহ দেশের কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সাথে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এরপর ঘুণিঝড়জনিত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে। তবে, স্বভাবিক বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে ভারতের অন্ধ্র উপকূল ও এর আশপাশের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, গ্রীষ্মের মধ্যভাগে টানা ২ দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়ে নগরজীবন। রাস্তাঘাটে ছিল না প্রতিদিনের যান ও জন চলাচলের ব্যস্ততা। টানা বৃষ্টির ফলে সবচেয়ে বেশী বিড়ম্বনার মুখে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষেরা। এছাড়াও রাস্তায় নিয়মিত যান চলাচল কম থাকায় অফিসগামী ও অফিসফেরতসহ প্রয়োজনীয় কাজে বের হওয়া লোকেরা পড়েন বিপাকে।
এছাড়াও, এই বৃষ্টির ফলে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় সাময়িক জলাবদ্ধতা। নগরীর বেশীরভাগ নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট জলবদ্ধতায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার পয়েন্টে সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা জল্লারপারগামী রাস্তাটি এমনিতেই চলাচলের অনুপযোগী। তার উপর এই বৃষ্টির ফলে খানখন্দে ভরা রাস্তায় পানি জমে লোক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এছাড়াও পাঠানটুলা, লন্ডনীরোড, সাগরদীঘিরপার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা ও উপশহরসহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লাউয়াই, বঙ্গবীর রোডসহ সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই রোডের কোথাও হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। অনেক দোকানেও পানি উঠে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জনৈক সিএনজি অটোরিক্সা চালক জানান, ওই এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু, ড্রেনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই এলাকায় প্রচন্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি