November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, January 5th, 2024, 8:05 pm

অস্ট্রেলিয়ার ছোবলে বিধ্বস্ত পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক :

দিনের শেষ বলটি ঠেকিয়েই হনহন করে হাঁটা দিলেন আমের জামাল। চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। অথচ ঘণ্টা দুয়েক আগেও তার মুখে ছিল হাসি, চেহারা ছিল ঝলমলে। তখন তিনি মাঠ ছাড়ছিলেন বল উঁচিয়ে ধরে। তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল সিডনির গ্যালারি। কিন্তু দিনের শেষে তার বীরোচিত পারফরম্যান্সই পড়ে গেল আড়ালে। পাকিস্তানের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া যে ম্যাচে ফিরল প্রবল প্রতাপে! ব্যাট হাতে ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলে পাকিস্তানকে তিনশ পার করিয়েছিলেন জামাল। এরপর আগুনে এক স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার লেজ গুটিয়ে দিয়ে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো শিকার করলেন তিনি ৬ উইকেট। কিন্তু তার এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পরও হারের মুখে পাকিস্তান।

সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে লিড পাওয়ার পরও এখন পরাজয়ের প্রহর গুণছে পাকিস্তান। তৃতীয় দিন শেষে দুই ইনিংস মিলিয়ে তারা এগিয়ে ৮২ রানে। উইকেট আছে কেবল ৩টি। শুক্রবার চা-বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে ১০ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অল আউট হয় ২৯৯ রানে। এই সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক ইনিংসে ৬ উইকেট শিকারি জামাল এবার ৬ উইকেট নেন ৬৯ রানে। পাকিস্তান পায় ১৪ রানের লিড। তাদের সেই আনন্দ উবে যায় ব্যাটিংয়ে নেমে। দিন শেষ করে তারা ৭ উইকেটে ৬৮ রান নিয়ে।

দিনের শেষ ভাগে এক ওভারে ৩টি সহ ৫ ওভারে স্রেফ ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন জশ হেইজেলউড। বৃষ্টিবিঘিœত আগের দিন খেলা হয়েছিল স্রেফ ৪৬ ওভার। তৃতীয় দিনে সব পুষিয়ে গেছে বিনোদনদায়ী ক্রিকেটে। এক দিনে পতন হয়েছে ১৫ উইকেটের। শেষ সেশনে দুই দল মিলিয়ে ১১ উইকেট পড়েছে স্রেফ ৭৮ রানে। অস্ট্রেলিয়া দিন শুরু করে ২ উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথ দলকে এগিয়ে নেন আরও। পাকিস্তানিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে অবশ্য দিনের প্রথম ২০ ওভারে স্রেফ ৩টি বাউন্ডারির দেখা পান তারা।

বাউন্ডারিতেই লাবুশেন ফিফটি পূরণ করেন ১৩১ বলে। লাঞ্চের একটু আগে পরপর দুই ওভারে বিদায় নেন দুজন। স্মিথের জন্য শর্ট কাভারে তিনজন ফিল্ডার রেখে বোলিং করেন বাঁহাতি পেসার মির হামজা। প্রথম বলেই সেই ফাঁদে পা দেন স্মিথ। শাফল করে ওই ফিল্ডারদের ওপর দিয়ে তুলে মারার চেষ্টায় সেখানেই ধরা পড়েন বাবর আজমের হাতে। ৮৬ বলে ৩৮ রান করে ফেরেন তিনি। এই নিয়ে সিরিজের ৫ ইনিংসের প্রতিটিতে ২৫ ছুঁলেও তার ফিফটি স্রেফ একটি। সেটিতেও আউট হয়েছেন ৫০ রানেই। ৭৯ রানের জুটি ভাঙার পর বিদায় নেন লাবুশেনও। অফ স্পিনারদের স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে দেন আঘা সালমান। ঝুলিয়ে দেওয়া বল উইকেটের ক্ষতস্থানে পড়ে তীক্ষ্ণভাবে টার্ন করে লাবুশেনের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় স্টাম্পে। ২১৩ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ১৪৭ বলে ৬০ রান করে তিনি। লাঞ্চের পরপর ট্রাভিস হেডকেও দ্রুত ফিরিয়ে পাকিস্তানকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান জামাল। এরপর অ্যালেক্স কেয়ারি ও মিচেল মার্শের লড়াই।

দ্বিতীয় নতুন বল নিতে বেশ অপেক্ষা করেন শান মাসুদ। মার্শ ও কেয়ারি গড়ে তোলেন জুটি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মার্শের ফিফটি আসে ১০৭ বলে। চা-বিরতি ঠিক আগে ৩৮ রান করা কেয়ারিকে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করে ৮৪ রানের জুটি ভাঙেন সাজিদ খান। বিরতির পর চোখের পলকে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ করে দেন জামাল। মার্শকে ফেরানোসহ দুই ওভারে দুটি করে উইকেট নিয়ে নেন তিনি। ৫ উইকেটে ২৮৯ রান থেকে ২৯৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। লিড পেয়ে যায় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ম্যাচে ফিরতে সময় নেয়নি। প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান আব্দুল্লাহ শফিক। দুই ইনিংসেই শূন্যতে বিদায় নিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের সপ্তমবার রান দেওয়ার আগেই উইকেটের দেখা পেলেন স্টার্ক। পরের ওভারেই হেইজেলউডের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে আউট অধিনায়ক মাসুদ।

প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব এবার সাহসী কিছু শট খেলেন। এর মধ্যে ছিল স্টার্কের বলে আপার কাট করে একটি ছক্কাও। ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনারের সম্ভাবনাময় ইনিংস ৩৩ রানে থামান ন্যাথান লায়ন। ট্রাভিস হেডের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ২৩ রানে বিদায় নেন বাবর আজম। অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া বাবর সিরিজ শেষ করলেন ৬ ইনিংসে ১২৬ রান নিয়ে। ফিফটি নেই একটিও। দিনের শেষের আগের ওভারে পাকিস্তানের ইনিংস বিধ্বস্ত করে দেন হেইজেলউড। এক ওভারেই তিনি একে একে বিদায় করেন সাউদ শাকিল, সাজিদ খান ও আঘা সালমানকে। ম্যাচ সেখানেই অনেকটা হেলে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩১৩

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১১৬/২) ১০৯.৪ ওভারে ২৯৯ (লাবুশেন ৬০, স্মিথ ৩৮, হেড ১০, মার্শ ৫৪, কেয়ারি ৩৮, স্টার্ক ১*, কামিন্স ০, লায়ন ৫, হেইজেলউড ০; সাজিদ ২৬-৫-৭৩-১, হামজা ২১-৯-৫৩-১, হাসান ২১-৬-৫৩-০, জামাল ২১.৪-২-৬৯-৬, সালমান ২০-৩-৪৩-২)।

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ২৬ ওভারে ৬৮/৭ (শফিক ০, আইয়ুব ৩৩, মাসুদ ০, বাবর ২৩, শাকিল ২, রিজওয়ান ৬*, সাজিদ ০, সালমান ০, জামাল ০*; স্টার্ক ৪-১-১৫-১, হেইজেলউড ৫-২-৯-৪, কামিন্স ৪-০-১৭-০, লায়ন ৯-২-১৬-১, হেড ৪-১-৭-১)।