২১-২২ মে বাংলাদেশ সফরে আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। তার এই সফরের মূল লক্ষ্য থাকবে- বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা জোরদারের উপায় খুঁজে বের করা।
রবিবার সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, তার সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, রোহিঙ্গা সংকট, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, পেনি ওং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গ্রুপের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অফিসের প্রধান মিশেল চ্যানসহ একটি ছোট প্রতিনিধি দল।
রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি দেখতে সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীর।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গা ইস্যুকে আলোচনায় রাখতে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার এবং তাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন ওং। ১৯৭৬ সালে তার পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসে এবং অ্যাডিলেডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর।
অস্ট্রেলিয়ার এক কূটনীতিক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর বাংলাদেশের প্রতি দেশটির ক্রমবর্ধমান আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ।
চলতি মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং একসঙ্গে অবদান রাখতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
জানুয়ারিতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘ভারত মহাসাগরীয় রাষ্ট্র হিসেবে সার্বভৌমত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলের প্রতি আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং তা দু’দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার প্রসার ঘটায়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলা করে।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভারত মহাসাগরে ‘শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার’ প্রচারে তাদের অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
অ্যালবানিজ উল্লেখ করেন, ‘আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানবাধিকার প্রচার, মানব পাচারে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের অনেক সাধারণ স্বার্থ রয়েছে।’
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করতে একটি কাঠামো চুক্তি সই করেছে।
ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা) গত ৫ দশকে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে এই ধরনের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক মিথস্ক্রিয়া এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত বছরের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিম ওয়াটস বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
সফরকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় তাদের অভিন্ন স্বার্থ এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারে একসঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুককে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া এমন একটি অঞ্চল চায় যেখানে ‘কোনো দেশ আধিপত্য বিস্তার করবে না এবং কোনো দেশই আধিপত্যের শিকার হবে না’।
দেশটি মনে করে, এ ধরনের একটি অঞ্চল গড়ে তুলতে এ অঞ্চলের সব দেশের প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ওই সময় গ্রুপ সেশনে ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াটস বলেছিলেন, ‘ওই প্রেক্ষাপটে আমরা বাংলাদেশ সরকারের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুককে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের পক্ষে যুক্তি দেয়।’
অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি ঢাকায় তাদের হাইকমিশনে একজন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পাঠিয়েছে এবং বিনিময়মূলকভাবে তারা অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের একজন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য তাদের ‘উদ্দেশ্য ও ইচ্ছার’ প্রতীক।
এক কর্মকর্তা জানান, আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় দুই দেশের পঞ্চম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বছরের মার্চে ঢাকায় চতুর্থ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখন প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এর অত্যন্ত পরিপূরক বাণিজ্যিক শক্তিকে প্রতিফলিত করে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ