নিজস্ব প্রতিবেদক:
একের পর এক আইনজীবী ছাড়াই প্রার্থীদের সরাসরি মামলার শুনানিতে দাঁড়ানো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত বলেন, মঙ্গলবার (২রা নভেম্বর) থেকে আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও কোনো বিচারপ্রার্থী আদালতে দাঁড়ালে ওই আইনজীবীর সনদ বাতিল করে দেওয়া হবে। সোমবার (১লা নভেম্বর) বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী সরাসরি মামলার নিষ্পত্তির আবেদন করতে আদালতে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন। এদিন আপিল বিভাগের বিচারকাজ শুরু হলে প্রথমেই দুজন নারী বিচারপ্রার্থী দাঁড়িয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে সরাসরি আদালতে আবেদন করেন। তারা আদালতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার প্রার্থনা করেন। এসময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের আইনমাফিক চলতে হবে। মানবিক আবেদন করবেন সরকারের কাছে। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখবো না। আমরা দেখবো আইনের দৃষ্টিকোন থেকে। মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে সরকার। কোর্টে কোনো মানবিকতা নেই। মানবিকতা এতটুকুই করতে পারবো, মামলাটি তাড়াতাড়ি শুনবো। পরে মামলাটি আজ মঙ্গলবার শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। এদিকে ওই দুই নারীর আবেদনের পরপরই আরেকজন বিচারপ্রার্থী তার আবেদন নিয়ে আদালতে হাজির হন। তিনি নিজেকে বেকার যুবক দাবি করে বলেন, আমি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। সেই মামলায় হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছি। মামলাটি আপিল বিভাগে অপেক্ষমাণ আছে। কিন্তু রেলওয়ে আমাদের নিয়োগ দিচ্ছে না। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা তো মহা মুশকিল। আপনার আইনজীবী কোথায়? এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, চেম্বার আদালতে আবেদন না দিয়ে আপিলে চলে আসছেন কেন? একটা ফ্যাশন শুরু হয়ে গেছে, আইনজীবী ছাড়া কোর্টে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়া। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আপনার আইনজীবী কে? জবাবে ওই বিচার প্রার্থী বলেন, পঙ্কজ কুমার কু-ু। তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, আপনার আইনজীবী থাকতে আপনি এখানে দাড়াঁতে পারেন না। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আগামীকাল থেকে তো দেখছি লাইন লেগে যাবে। আইনজীবী থাকলে আপনি দাঁড়াতে পারেন না। আপনার মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড যিনি আছেন তাকে দিয়ে আবেদন দেন। এরপর আরেকজন আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমি মসজিদের মোয়াজ্জিন। আমি খুবই গরিব মানুষ। আমি মানুষের জাকাত-ফেতরা নিয়ে খাই। স্যার আমার মামলটা বন্ধ হয়ে রয়েছে। যদি দয়া করে একটু দেখতেন। একের পর এক এভাবে আইনজীবী ছাড়া সরাসরি কোর্টে দাঁড়ানোর ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এরপর থেকে যেসব আইনজীবীর মক্কেল সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়াবে আমরা তার সনদ বাতিল করে দেবো। আগামীকাল থেকে যারা দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে তাদের সনদ আমরা পাঁচজন (আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ) মিলে বাতিল করে দেবো। আপনার আইনজীবী আছে কিনা আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিচার প্রার্থী বলেন, উকিল আছে। অনেক টাকা চায়। তখন আদালত বলে, আপনি আইনজীবী না রেখে থাকলে আপনারটা শুনবো। আপনার মামলার নম্বর দিয়ে যান। এরপর কার্যতালিকায় থাকা মামলাসমূহের শুনানি শুরু করেন আপিল বিভাগ। এর আগে গত রোববার একজন নারী বিচারপ্রার্থী আইনজীবী না থাকায় নিজ মামলা নিয়ে আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম