নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিভিন্ন স্থানেই কৃষিজমির ওপরের মাটি বা টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি, অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে। ইটভাটা ও টাইলস কোম্পানিগুলোর টাকার লোভ এবং অসচেতনতার কারণে কৃষকরা জমির উর্বর মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। আর তাতে ভূমিকা রাখছে জাতীয় ভূমিনীতি বিরোধী স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিন্তু আইনের অভাবে মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে কৃষকের কৃষিজমি থেকে ওপরের মাটি তুলে নিচ্ছে। এটা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। কারণ ধান এদেশের প্রধান ফসল। ধান গাছের শেকড় ৫-৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর ওই ৯ ইঞ্চি পর্যন্তই থাকে মাটির মূল পুষ্টিগুণ। সেজন্যই ফসলি জমির ওপরের মাটি কোনোভাবেই অন্য কাজে লাগানো ঠিক নয়। কিন্তু অসচেতন কৃষকরা টাকার জন্য কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থে এটা বন্ধে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
সূত্র জানায়, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০০১-এর ৫.৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘উর্বর কৃষিজমি যেখানে বর্তমানে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময়, তা কোনোক্রমেই অকৃষিকাজের জন্য যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন নির্মাণ, গৃহায়ন, ইটভাটা তৈরি ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যাইবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনেও কৃষিজমির ওপরের মাটি রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার ও দুই-তিন ফসলি জমিতে পুকুর কেটে অবাধে মাছ চাষের কারণে প্রতিনিয়ত কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। আর কৃষিজমির ওপরের মাটি কেটে নিলে ফসল উৎপাদন কম হবে। এটা না জানার কারণে অনেক কৃষক মাটি বিক্রি করে দেয়। আবার অনেকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এটা শুধু কৃষকের ক্ষতি নয়, দেশের জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্যও বড় ক্ষতি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় পরিবেশ আইনসহ বিভিন্ন আইনের আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। তাই যুগোপযোগী একটি আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে ওই অনিয়ম বন্ধ করা যায়।
সূত্র আরো জানায়, শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগে জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার অনিয়ম বন্ধ করা কঠিন। সেজন্য রাজনৈতিক উদ্যোগেরও প্রয়োজন। কারণ ওই কাজে স্থানীয় প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকায় তা পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। বরং মাটিখেকোদের কারণে সাধারণ কৃষক খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছে। যারা লোভে জমির মাটি বিক্রি করে দেয় তাদের জন্য পাশের জমির মালিকরা সমস্যায় পড়ছে। কোনো কোনো এলাকায় ২০-৩০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কৃষিজমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাশের জমি ভাঙছে। তাতে মাটি বিক্রি না করেও পাশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ওসব ক্ষেত্রে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। অথচ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফসলি জমির সুরক্ষার বিকল্প নেই।
এদিকে এ বিষয়ে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার জানান, ইটভাটার মালিকরা খুব কৌশলে টপ সয়েল কেটে নেয়ার কাজটি করে থাকে। আর অসচেতন কৃষক নগদ টাকা ও পানি খরচ বাঁচানোর লোভে তা করে। কিন্তু তারা জানে না যে ওপরের মাটিতে গাছের খাদ্য উপাদানের মূল আধারগুলো থাকে। ওই মাটি চলে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যায়। ৮-১০ বছরেও আগের অবস্থানে ফেরে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, উর্বর কৃষি জমির ওপরের অংশ কেটে নেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আরো কঠোর হতে হবে। যদিও শিল্পায়ন করতে হলে কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হয়। তবে সেক্ষেত্রে উর্বর কৃষিজমি থেকে মাটি না নিয়ে অনুর্বর জমি থেকে মাটি নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম