অনলাইন ডেস্ক :
মাত্র বাইশ বছর বয়স ছেলেটির। বছর তিন-চারেক আগেও সানরাইজার্স হায়দরাবাদে নেট বোলার ছিলেন- যে টিমে তখন খেলছেন ‘ফিজ’ মোস্তাফিজুর রহমানের মতো তারকারা। গত বছর টি নটরাজন কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় প্রথমবার সানরাইজার্সের হয়ে আইপিএলে অভিষেক; আর এই মৌসুমে তো দলের বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্রই বলা চলে তাকে। নাম-পরিচয়ে যাওয়ার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক, ক্রিকেট বিশ্বের রথী-মহারথীরা কী বলছেন এই ছেলেটিকে নিয়ে। ডেল স্টেইন: এরকম বাচ্চা একটা ছেলে একটানা ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বল করে যাচ্ছে, ভাবাই যায় না। ওর সামনে ব্যাট হাতে দাঁড়ানোটা মোটেই উপভোগ্য নয়, কিন্তু দৃশ্যটা সুপার-এক্সাইটিং! সুনীল গাভাস্কার : শুধু স্পিড না, ওর অ্যাকিউরেসি-টাও মারাত্মক। ওরকম গতিতে যারা বল করে তাদের খুব ওয়াইড-ও হয়, কিন্তু ও ব্যতিক্রম। উইকেট-টু-উইকেট বল করে যেতে পারলে ওকে খেলাই অসম্ভব হয়ে পড়বে – আর ভারতের হয়ে তো ও খেলবেই।
ইয়ান বিশপ: গত বছর ওকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমি অভিভূত। জেনুইন পেস যাকে বলে, ও সেটা করতে পারে – এ বস্তু আপনি সুপারমার্কেটে গিয়ে কিনতে পারবেন না। লাইন-লেংথ ট্রেইন করে শেখানো যায়, এটা শেখানো যায় না। বাঘা বাঘা ব্যাটাররা ওকে সামলাতে হিমশিম খাবে, দেখে নেবেন।
ইরফান পাঠান: ও একজন ‘স্পেশাল প্লেয়ার’। ওকে যখন প্রথমবার দেখি, তখনই আমার ওয়াকার ইউনুসের কথা মনে পড়েছিল। রান-আপটা দেখবেন – ফ্যান্টাস্টিক! সামনের পা একদম সোজা থাকে, ফলো-থ্রু টাও দারুণ! যখন বলটা ছাড়ে সিম পজিশন-টা খেয়াল করবেন … এ ছেলে বহু দূর যাবে।
রবি শাস্ত্রী : এই ছেলেটা খেললে আপনি টেলিভিশনেও বল থেকে এক মুহূর্তের জন্য চোখ থেকে সরাতে পারবেন না। অনবদ্য!
হরভজন সিং: এবারের আইপিএলে কী খেলাটাই না খেলছে ও! সুররিয়াল ওভার দেখলাম। (ভারতের) ব্লু জার্সি ¯্রফে সময়ের অপেক্ষা।
শ্রীকান্ত: টেরিফিক বোলিং। সত্যিকারের পেস ব্যাটারের কী হাল করতে পারে, সেটা শুধু দেখে যান!
কেভিন পিটারসন ছোট্ট একটা টুইট করেছেন ছেলেটাকে নিয়ে। রকেটের ইমোজি দিয়ে বুঝিয়েছেন কী গতিতে উত্থান হচ্ছে ওর। গোটা আইপিএল ক্যারিয়ারে এখনো দশটা ম্যাচও খেলেননি উমরান মালিক। এর মধ্যেই ক্রিকেট জগতে এরকম সাঙ্ঘাতিক আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন এই কাশ্মিরি যুবক। সম্প্রতি পাঞ্জাব টিমের বিরুদ্ধে ২০তম ওভারে তিনটে উইকেট দিয়ে (আর একটা রান আউট) একটাও রান দেননি। আইপিএলের ইতিহাসেই শেষ ওভারে মেডেন নেওয়ার ঘটনা এ নিয়ে তৃতীয়বার। তার পর থেকে তো বাঁধবাঙা উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে উমরানকে নিয়ে। জম্মু ও কাশ্মিরের গুজ্জরনগর নামে একটি ছোট্ট শহরের এক সামান্য ফল-বিক্রেতার ছেলের মধ্যে এত প্রতিভা লুকিয়ে ছিল, সেটা দেখতে পেয়ে পুরো দেশও যেন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েছে। অথচ কোনওদিন জেলা টিমের হয়ে খেলেননি উমরান। এমন কী ক্লাব ক্রিকেটও না। কিন্তু সবাই জানতো দারুণ জোরে বল করতে পারে। তাই ওকে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হতো বিভিন্ন টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতাতে। পটাপট বিপক্ষের উইকেট তুলে পকেটে কিছু টাকা পেয়েই খুশি ছিল ছেলেটি। ‘তবে বাবাকে দেখতাম ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা-বারোটা পর্যন্ত ফলের দোকানের পেছনে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। ওনার মুখে হাসি ফোটাতে আমাকে খেলেই রোজগার করতে হবে, এটা জানতাম’- সম্প্রতি স্টার স্পোর্টস ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন তিনি। বন্ধুদের অনুরোধে একবার জম্মু ও কাশ্মিরের আন্ডার-নাইনটিন ক্রিকেট দলের ট্রায়ালে গিয়েই বাজিমাত করেন উমরান। নজরে পড়ে যান সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানের। এরপর খুব দ্রুতই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে বাকিটা তো ইতিহাস। জম্মু ও কাশ্মির থেকে উঠে আসা কোনও ক্রিকেটার এর আগে ভারতীয় ক্রিকেটে এতটা সাড়া জাগাতে পারেননি। পারভেজ রসুল ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি দ্রুত হারিয়েও গেছেন। সেই জায়গায় উমরান মালিককে সবাই ‘লম্বা দৌড়ের ঘোড়া’ হিসেবেই চিহ্নিত করছেন। ঘটনাচক্রে ভারতীয় ক্রিকেটে উমরান মালিকের উত্থান হচ্ছে এমন একটা সময়ে, যখন কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর সে দেশের সরকারও ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়নে’র এজেন্ডাকে সর্বশক্তিতে তুলে ধরতে চাইছে। ২০১৯ সালের আগস্টে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর আজই (রোববার ) প্রথম জম্মু ও কাশ্মির সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও তার ভাষণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এই দুটি বিষয়ের ওপরেই। সেই ‘নয়া কাশ্মিরে’র অগ্রযাত্রারই পোস্টার বয় হয়ে উঠেছেন একজন অসম্ভব প্রতিভাবান পেসার ও তরুণ কাশ্মিরি – যার নাম উমরান মালিক। এখন ভারতের জাতীয় দলে তার অভিষেকেরই প্রহর গুনছে পুরো দেশ।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা