উজানের পাহাড়ি ঢল নামায় সিলেট অঞ্চলে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। এতে বিপাকে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের। চারদিকে পানিবন্দি হয়ে আবাসিক হলে আটকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এই আকস্মিক বিপর্যয়ে প্রথম থেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় সামলে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়(শাবিপ্রবি) প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় মেয়েদের দুই আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার পানির সংস্পর্শে থাকায় হলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় গত ১৬ জুন থেকে খাবার পানি সরবরাহ বন্ধসহ অন্যান্য দিকে সমস্যা তৈরি হয়। প্রথম দিন থেকে হল প্রাধ্যক্ষদের তৎপরতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
১৭ জুন সরেজমিনে আবাসিক দুই হলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল এবং ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিনা পারভীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এই সময় মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ছাত্রীদের উদ্ধারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এগিয়ে এসে সহায়তা করে।
একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টারে আটকে পড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়াসহ খাবার, ওষুধ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও করে প্রক্টরিয়াল টিম। বন্যায় আটকে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের যারা হল ছাড়তে পারিনি তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকৃত হোস্টেল আমির ও ফজল কমপ্লেক্সে রাখা হয়।
বন্যার পানির দুর্ভোগ এড়াতে ১৭ জুন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করে। বন্যা পরিস্থিতিতে সকল ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুক্রবারের (১৭জুন) “চ” ইউনিটের ২০২১-২০২২ সেশনের সিলেট অঞ্চলের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলা বিভাগ ও প্রথম ছাত্রী হলের শিক্ষার্থী নিলুফা আক্তার নীলা বলেন, ১৬ জুন যখন পানি বাড়তে থাকে সেদিন বিকালেই প্রভোস্টবডি জরুরি মিটিং ডাকে। শুরু থেকে প্রভোস্টবডি আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। পরেরদিন রিকশা ও বাসের মাধ্যমে হল থেকে নিরাপদে বের করে আনেন। আকস্মিক বন্যায় আমরা শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি চিন্তিত ছিলাম। প্রশাসনের দায়িত্বশীল আচরণ আমরা সন্তুষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা পরিবহনে দুইদিনে শাবিপ্রবির ১২টি বাস ৯০টি ট্রিপ পরিচালনা করে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সিলেট নগরীর হুমায়ূন রশীদ চত্ত্বর, টিলাগড়, ঈদগাহ, কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে।
লোকপ্রশাসন বিভাগ ও সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সায়মন আক্তার পুস্প জানান, ক্যাম্পাস এলাকায় বন্যার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। শুরুতেই অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঠিক সময়ে উদ্ধার অভিযান আমাদের মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি দিয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। পানি নামার সাথে সাথে চারপাশের উপযুক্ত পরিবেশের জন্য কাজ করছে নিয়োজিত কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইসরাত ইবনে ইসমাইল বলেন, বন্যার প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই আমাদের প্রস্তুতি ছিল বলে আমরা দ্রুত শিক্ষার্থীদের নিরাপদ জায়গায় সরাতে পেরেছি। ইতোমধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে। আমরা চারদিকে খোঁজখবর রাখছি একই সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। ক্যাম্পাসের পানি কমলেও সিলেট অঞ্চলের অনেক জায়গায় পানি কমেনি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। হলের চারপাশ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ করেই শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে ওঠার আহ্বান জানাবো।
শাবিপ্রবির ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন বলেন, শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে কাজ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। আকস্মিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের সকলেরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। স্বাভাবিক ও নিরাপদভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষায় ফেরানো যায় এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ রাখা হচ্ছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
এইচএসসির ফল প্রকাশ শিগগিরই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে: বেরোবি উপাচার্য
তিন মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা