নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি ও ইবতেদায়ি) পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে তোলা হবে। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ঈদের পর প্রথম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে দেশের বিভিন্ন উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী বছর থেকে তা সব বিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হবে না। ক্লাসে ধারাবাহিক মূল্যায়ন শুরু করা হবে। চলতি বছরের পিইসি-ইবতেদায়ি পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে ক্লাস বন্ধ ছিল। সে কারণে পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে ক্লাসভিত্তিক শিখন জ্ঞান যেন অর্জন করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, আমরা পরীক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছি না। গত দুই বছর শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে সেটি পূরণ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার চাইতে ক্লাসে ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়ালেখা থেকে সরে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পিইসি-ইবতেদায়ি পরীক্ষা হবে কি হবে না সে ধরনের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে উঠুক সেটি আমাদের কাম্য। পরীক্ষার বিষয়ে ঘোষণা দিলে তারা শুধু পরীক্ষার পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এতে করে কোচিং বাণিজ্য শুরু হবে। তাই আগামী নভেম্বরের দুই-তিন মাস আগে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের নির্ধারিত আসনে বসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সব প্রবেশ ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের আলাদা কেন্দ্র করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রার্থীরা কোনো ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাই নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রে প্রবেশের আগে পুরুষ-নারী পুলিশ দিয়ে প্রার্থীদের তল্লাশি করা হবে। কেন্দ্রে সব ধরনের অনিয়ম রোধে তিন স্তরের নিরাপত্তা বসানো হবে। সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্র সচিবের কাছে একটি অ্যানালগ ফোন থাকবে। তিনি ছাড়া অন্য কারও কাছে ফোন থাকবে না। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে নির্ধারিত আসন বসতে হবে। ৩০ মিনিট আগে সব প্রবেশের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। পুরুষ-নারীদের আলাদা কেন্দ্র করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ছবি ও স্বাক্ষর মিলিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। কে কোন সেটের প্রশ্ন পাবেন তা পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে জানানো হবে। ভিন্ন সেটে পরীক্ষা দিলে তা প্রার্থীর খাতা বাতিল করা হবে। আগে জেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হলেও এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে পড়ায় এটি বাতিল করে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। প্রার্থীর রোল নম্বর, আসন বিন্যাস, প্রশ্নপত্র পাঠানো ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্ততসহ সব কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। দালাল বা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো ধরনের অর্থ লেনদেন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া বা গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাতে বলা হয়েছে। তিন ধাপের পরীক্ষা দ্রুত সময়ে শেষ করে মৌখিক পরীক্ষা শুরু করা হবে। জুলাইয়ের মধ্যে যোগ্যপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা তিন ধাপে আয়োজন করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীদের যোগদান শুরু হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গত দুই বছরে অনেক সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য হয়ে গেছে। সে কারণে এ নিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা তিনটি ধাপে আয়োজন করা হবে। প্রথম ধাপে ২২ এপ্রিল ২২ জেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ২০ মে ৩১ জেলায় এবং তৃতীয় ধাপে ৩ জুন দেশের ৩১ জেলায় নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এক ঘণ্টার প্রতিটি পরীক্ষা শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তিন ধাপে সারাদেশে মোট ১৩ লাখ ৯ যার ৪৬১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানে দেশের ৬১ জেলায় ১ হাজার ৮১১টি কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে লিখিত পরীক্ষা পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কড়া নিরাপত্তা প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। কেউ চাকরি দেওয়ার নামে প্রলোভন দেখালে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রমুখ।
আরও পড়ুন
এইচএসসির ফল প্রকাশ শিগগিরই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে: বেরোবি উপাচার্য
তিন মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা