May 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 27th, 2024, 2:12 pm

আগামী ৩ মার্চ শুরু হচ্ছে ডিসি সম্মেলন : আরো বেশি ক্ষমতা চান ডিসিরা

অনলাইন ডেস্ক :

আগামী ৩ থেকে ৫ মার্চ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। কাবী কর্ম-অধিবেশন গুলো রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের পর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। সমাপনী দিবসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলা সুযোগ পাচ্ছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ডিসিরা। গত বছর ডিসিদের ২৩৭টি প্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগ প্রস্তাবেই বাস্তবায়ন হয়নি। সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি,উন্নয়ন প্রকল্পে ডিসিদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের বৃদ্ধমান সমস্যা সমাধন, রোহিঙ্গা সংসকট সমাধনসহ ডিসিদির পাঠানো প্রায় ৪০০টি প্রস্তাবের মধ্যে থেকে ২৪৫টির বেশি প্রস্তাব কার্যপত্রে স্থান পাচ্ছে। আগামী ৩ মার্চ এসব প্রস্তাবের উপর ৫৫টি অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবও সচিবরা আলোচনা করবেন। তবে এবারো ঘুরে ফিরে বেশিরভাগ আগের প্রস্তাব গুলো দিয়েছেন ডিসিরা। এছাড়া সম্মেলনে ৬৪ জেলা ডিসি-৮বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। তিনদিন ব্যাপী ডিসি সম্মেলনে ২১টি কার্য অধিবেশন থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর সব কাজ সমন্বয় করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

দ্বাদশ নির্বাচনের নতুন সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তা ডিসিদের নতুন করে নির্দেশনা দেবেন। মাঠের রাজনৈতিক চাপ-অর্থনীতি এবং সারাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ও সমস্যা গুলোর বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ডিসিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে ডিসিরা তুলে ধরবেন তাদের সমস্যাগুলো। এছাড়া জেলায় ডিসিদের কাজ করতে গিয়ে কি কি ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হয় তাও তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রীকে। স্থানীয় মন্ত্রী-এমপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা গতকয়েক বছর থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ডিসি-ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) উপর উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়য়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। এ বিষয়টি এবার ডিসি সম্মেলনে তুলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত বছর তিনদিন ব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের ২৩৭টি প্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগ প্রস্তাবেই বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২০২২ সালের ডিসি সম্মেলনে প্রস্তাব/মতামতের সুপারিশের ভিত্তিতে ২৪২টি সিধান্ত গৃহীত হয়েছে।এর ৭২টি স্বল্লমেয়াদি, ১০৫টি মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদী ৬৫টি। এর মধ্যে ৭২টির মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৫৮টি এবং ১৪টি বাস্তবায়ন হয়নি।

মধ্যমেয়াদীর ১০৫ টির প্রস্তাবের মধ্যে ৭৭টি বাস্তায়ন হয়েছে এবং ২৮টি বাস্তবায়ন হয়নি।এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদীর প্রস্তাব ছিলো ৬৫টি এর মধ্যে ২৩ বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থচ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার দেখানো হয়েছে ৭৩ শতাংশ। গত বছর এ গুলো বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বার বার চিঠি দিলেও অনেক গুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে,দেশের সকল উপজেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যাগের প্রস্তাব। আইএমইডি এর অধিনে একটি করে অধিদপ্তরসহ বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব, বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য সরকারি কর্মচারীর আচারণ বিধিমালার মতো সুনিদির্ষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব, বাংলাবান্ধায় পযর্টন মোটেল এবং তেতুলিয়া উপজেলা রিসোর্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি সমন্বিত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব, দেশের মহাসড়কগুলোতে প্রশত লেনে কম গতিসম্পন্ন যান চলাচল বন্ধের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে এ প্রস্তাব, মানিগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া হয়ে রাজবারী জেলার দৌলতদিয়া এবং পাবনা জেলার কাজিরহাট যুক্তকরে সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু পর্যন্ত টানেল নির্মাণের প্রস্তাব,পরিবেশ দুষণ রোধে ভূ-উপরিস্থিত সুপেয় পানি ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রনয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সারে মধ্যে পানি সংকটের সমাধনকল্পে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নদীর পানি ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রস্তাব,সীমান্তবর্তী নদ-নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাধঁ মেরামতের কাজ নির্বিঘ্ন কাজ করার জন্য ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য উদ্যাগ গ্রহণের প্রস্তাবসহ শতাধিক প্রস্তাব বাস্তবায়ন করকে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলো। এসব প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে বার বার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও অনেক মন্ত্রণালয় ডিসিদের প্রস্তাবগুলো এ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি বলে মন্ত্রপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) আমিন উল আহসান বলেন, নতুন সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী মাঠ কর্মকর্তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেবেন। তার বক্তব্য এবং নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপালন অধিক প্রেরণা হিসাবে কাজ করবে। ডিসিরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের কর্মলব্ধ অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। মাঠের রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং সারাদেশের উন্নয়ন ও সমস্যাগুলোর বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ডিসিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন। জানাবেন তাদের সমস্যাগুলো। কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হবে সেই প্রস্তাবও তারা জানাবেন প্রধানমন্ত্রীকে। নতুন সরকারের মন্ত্রীরা মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ডিসিদের নির্দেশনা দেবেন। মন্ত্রণালয়ের কাজে ডিসিদের গাইডলাইন দেবেন। তাদের পরামর্শ এবং নির্দেশনায় ডিসিদের দায়িত্ব পালনের গতি বেগবান হবে। নতুন করে প্রেরণা পাবেন। সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন। ডিসিরা কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। সেগুলো তারা তুলে ধরবেন সম্মেলনে। আবার মাঠের কাজে অনেক সমস্যা ডিসিদের নজরে আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই কর সম্মেলনের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশন আলোচনা করা হয় এবং সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে ডিসি সম্মেলন করা হয়। ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য অধিবেশন, একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা এবং প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ আর একটি সমাপনী অনুষ্ঠান যুক্ত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের এক জেলা প্রশাসক জানান, রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোন সফল পদক্ষেপ আসেনি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো বড় পদক্ষেপ সরকারে পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়ার প্রয়োজন।

রাজশাহী বিভাগের এক জেলা প্রশাসক জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছে। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে তৎপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পাঁচ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সমন্বিত বৈঠক করেছে। বাস্তবে এ গুলো সমাধন হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।