নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে দেশে আগের তুলনায় বেশি পরিবাশে তৈরি পোশাক রপ্তানির আদেশ বাড়ছে। ফলে ছোট-বড় কিংবা ঠিকা কাজের কারখানা (সাব-কন্ট্রাক্ট) সবখানেই দিনরাত কাজ চলছে। এমনকি কাজের চাপে কোনো কোনো কারখানা দুই শিফটে উৎপাদন করছে। মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে মোট ১৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১০১ কোটি ডলারের পোশাক। আর গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আদেশ আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। পরিমাণে মোট ৩৭৫ কোটি ডলার। আগের বছরের একই মাসে রপ্তানি আদেশ ছিল ২৩০ কোটি ডলার। তারপর গত ফেব্রুয়ারিতে ৩২ শতাংশ রপ্তানি আদেশ বেড়েছে। ওই মাসটিতে মোট ২৬৩ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি ডলার। তবে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে হওয়ায় অন্যান্য মাসের তুলনায় অন্তত দু’দিনের উৎপাদন এবং রপ্তানি কম হয়ে থাকে। তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের রপ্তানি খাত গত বছরের এপ্রিল থেকেই করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তারপর প্রায় প্রতি মাসেই আগের মাসের চেয়ে রপ্তানি বাড়ছে। তৈরি পোশাকের রপ্তানি ডিসেম্বরে রেকর্ড ৪০৪ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। জানুয়ারিতে তা বেড়ে আরো ৪০৯ কোটি ডলারে বেড়ে। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৫১ কোটি ডলার। মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে রপ্তানি আগের একই সময়ের চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি হয়েছে।
সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের দাপট নিরঙ্কুশ। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির দখলে প্রধান রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাজার হিস্যার দিক থেকেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে চীন। দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় ওই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি। অতিমারি করোনার কবলে পড়ে গত বছর ভিয়েতনামের কাছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা খোয়া যায়। তবে পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশের অনুকূলে। ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা এখন ওই দুই দেশ থেকে রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে সরিয়ে নিয়ে আনছে। যে কারণে বাংলাদেশে এখন তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশের ঢল নেমেছে।
সূত্র আরো জানায়, ব্র্যান্ড-ক্রেতারা শোরুমে সময়মতো পণ্য ওঠাতে কোনো রকম ঝুঁকিতে যেতে চায় না। ওই কারণে কয়েকটি দেশে রপ্তানি আদেশ ভাগ করে দেয়া হয়। ফলে অনেক ব্র্যান্ড ক্রেতা যেমন বাংলাদেশকেও রপ্তানি আদেশ দেয়, আবার একই সঙ্গে চীনকেও দেয়। বর্তমানে ওই রকম ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে রপ্তানি আদেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বাড়তি ওই রপ্তানি আদেশ চীন-ভিয়েতনাম থেকেই সরিয়ে আনা হয়েছে বলে উদ্যোক্তারা মনে করে। কারণ দেশ দুটি একাধিক কারণে উৎপাদন সংকটে পড়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে চীন সপ্তাহে ৩ দিন উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে চীনের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কমেছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে চীনের লাল চিহ্নিত কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানকার শত শত কারখানা এখন বন্ধ। ওই কারণেই ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা চীন থেকে রপ্তানি আদেশ সরিয়ে এখন বাংলাদেশমুখী। ফলে বর্তমানে দেশের কারখানাগুলোয় রপ্তানি আদেশ এখন দ্বিগুণ এবং অনেক রপ্তানি আদেশ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওর সর্বশেষ ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ব পোশাক বাজারে চীনের অংশ ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেক্ষেত্রে ভিয়েতনামের অংশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
এদিকে তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছ থেকে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে। মূলত চীনের সঙ্গে দেশটির বৈরী সম্পর্ক এবং শুল্ক লাড়াইয়ের কারণে মার্কিন ক্রেতারা চীনের প্রতি বিমুখ। ফলে অনেক ক্রেতাই চীন থেকে রপ্তানি আদেশ সরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কমপ্লায়েন্ট কর্মপরিবেশের সুবিধাও তাতে যোগ হয়েছে। আশা করা যায় আগামীতে রপ্তানি আদেশ আরো বাড়বে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি