অনলাইন ডেস্ক :
দিনের প্রথম বলে জ্যাক ক্রলির দারুণ কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি। শুরুর সেই মনোভাব দিন জুড়ে ধরে রেখে ব্যাটিং করলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ছয় জনের পাঁচ জন স্পর্শ করলেন অন্তত চল্লিশ। যার মধ্যে তিন জনের ব্যাট থেকে এলো ফিফটি। তাদের লিড পেরিয়ে গেল পৌনে চারশ। ওভালে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টের তৃতীয় দিন একটা সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ৪ উইকেটে ৩৩২। এরপর ৪৭ রানের মধ্যে ৫ উইকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশদের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৮৯ রান। ওভারপ্রতি পাঁচের কাছাকাছি রান তুলে স্বাগতিকরা এগিয়ে আছে ৩৭৭ রানে। জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার খানিক পরই আচমকা ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
এই সিরিজেই ৬০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা ৩৭ বছর বয়সী পেসার জানিয়ে দেন, এটিই তার পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। অল্পের জন্য এ দিন সেঞ্চুরি পাননি জো রুট। ১০৬ বলে ১১ চার ও এক ছক্কায় ৯১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ওপেনার ক্রলি ৭৬ বলে ৯ চারে করেন ৭৩। জনি বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকে আসে ১০৩ বলে ৭৮ রান। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক ও অফ স্পিনার টড মার্ফি মিলে নেন ৭ উইকেট। শেষেরটি নিতে পারলে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হবে স্টার্কের। ম্যাচের এখনও বাকি দুই দিন। আগেই অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়ার ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিততে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। এই মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জিতেছিল সেই ১৯০২ সালের অ্যাশেজে।
উইকেট ছিল এ দিন ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। দিনের ও ইনিংসের প্রথম বলে স্টার্ককে চারের পর নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রাখেন ক্রলি। রান বাড়ানোর কাজটা করেন মূলত বেন ডাকেট। প্রথম ঘন্টায় ১৩ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ৬৬ রান, ডাকেটের রান সেখানে ৩৯। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। প্রথম স্পেলে দুই ওভারে ২২ রান দেওয়া স্টার্ক দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে শুরুর জুটি (১০৪ বলে ৭৯) ভাঙেন উইকেট মেডেন নিয়ে। তার আউটসুইঙ্গারে কট বিহাইন্ড হন ডাকেট (৫৫ বলে ৪২)। অস্ট্রেলিয়া উইকেটটি পায় অবশ্য রিভিউ নিয়ে।
২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের পর এই প্রথম এবং ক্যারিয়ারে স্রেফ দ্বিতীয়বার তিন নম্বরে নামা বেন স্টোকসের সঙ্গে আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়েন ক্রলি। ফিফটি আসে তার ৬১ বলে। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে একটি উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান তোলে ইংলিশরা। লাঞ্চ-বিরতির পর জশ হেইজেলউডকে ছক্কায় উড়িয়ে অ্যাশেজের এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ছক্কার (১৫) রেকর্ড নিজের করেন স্টোকস। বাউন্ডারিতে বল স্টার্কের হাত ছুঁয়ে বাইরে যায়। পরের ওভারে প্যাট কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ক্রলি। সিরিজে ৫ টেস্টের ৯ ইনিংসে ৫৩.৩৩ গড়ে ক্রলির রান হলো ৪৮০। ঘরের মাঠে কোনো এক অ্যাশেজ সিরিজে ইংলিশ ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় তিনি এখন ষষ্ঠ স্থানে।
১৯৬৮ সালের সিরিজে সর্বোচ্চ ৫৫৪ রান করে রেকর্ডটি জন এডরিচের। রুট আগ্রাসী ব্যাটিং করেন শুরু থেকে। রিভার্স স্কুপে ছক্কা মারেন মিচেল মার্শকে। স্টার্ককে মারেন টানা তিনটি চার। ফিফটি করেন তিনি স্রেফ ৪২ বলে। ওই ওভারেই মার্ফিকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন স্টোকস। তার ৬৭ বলে ৪২ রানের ইনিংস গড়া ৩ চার ও এক ছক্কায়। একটি ছক্কা মেরেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন হ্যারি ব্রুক।
এরপর পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ বলে ১১০ রানের ইনিংস সেরা জুটি উপহার দেন রুট ও বেয়ারস্টো। সিরিজে দ্বিতীয় শতকের পথেই ছিলেন রুট। কিন্তু ৯ রান দূরে থাকতে মার্ফির নিচু হওয়া ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। প্রথম দিন ব্যাটিংয়ের সময় কুঁচকিতে চোট পাওয়া মইন আলি উইকেটে আসেন রুটের বিদায়ের পর। স্টার্কের চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৪টি চারে এই বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার করেন ২৯ রান। তার আগেই বেয়ারস্টো ও ক্রিস ওকসকে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। আলগা শটে কট বিহাইন্ড হন বেয়ারস্টো। দিনের শেষ ওভারে মার্ফিকে পরপর দুটি চার মারেন অ্যান্ডারসন। পরের বলে তাকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। তবে বেঁচে যান তিনি রিভিউ নিয়ে। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত। উল্লাসে ফেটে পড়ে স্বাগতিক দর্শকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮৩
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৯৫
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৮০ ওভারে ৩৮৯/৯ (ক্রলি ৭৩, ডাকেট ৪২, স্টোকস ৪২, রুট ৯১, ব্রুক ৭, বেয়ারস্টো ৭৮, মইন ২৯, ওকস ১, উড ৯, ব্রড ২*, অ্যান্ডারসন ৮*; স্টার্ক ১৯-২-৯৪-৪, হেইজেলউড ১৫-০-৬৭-১, কামিন্স ১৬-০-৭৯-১, মার্শ ৮-০-৩৫-০, মার্ফি ২২-০-১১০-৩)
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা