নিজস্ব প্রতিবেদক:
আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে এগিয়ে রয়েছে, পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছয়টি সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে, অন্যদিকে দেশে সরাসরি বাস রুট রয়েছে মাত্র তিনটি । বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র জানায়, ভারতীয় রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংযোগের জন্য নয়টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) রয়েছে। এই রুটের মধ্যে বর্তমানে খোলা আছে ছয়টি, কিন্তু ট্রেনগুলি পাঁচটিতে চলাচল করে, একটি রুটে এখনও চলাচল শুরু হয়নি। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত রেল যোগাযোগের জন্য একটি নতুন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক রেলপথ ও আন্তঃদেশীয় রেলপথের মধ্যে একটি – দর্শন। বাংলাদেশ থেকে গেদে, ভারতের ৩ কিমি লাইন, যার মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল করে। এটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ। ঢাকা-কলকাতা রুটে এই ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) দিয়ে আন্তর্জাতিক মালবাহী ট্রেনসহ দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন “মৈত্রী এক্সপ্রেস” চলাচল করে। যাত্রীবাহী ট্রেন “বন্ধন এক্সপ্রেস” মালবাহী ট্রেনের সাথে খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটের বেনাপোল (বাংলাদেশ)-পেট্রাপোল (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট ব্যবহার করে। রোহনপুর (বাংলাদেশ)-সিঙ্গাবাদ (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটিও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ।
এই রুট দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। বিরল (বাংলাদেশ)-রাধিকাপুর (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে, এই ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্য দিয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত। চিলাহাটি (বাংলাদেশ)-হলদিবাড়ি (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে ১ আগস্ট এ রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়।
বর্তমানে এই রুট দিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি বছরের ১ নভেম্বর আখাউড়া (বাংলাদেশ)-আগরতলা (ভারত) রেলপথের উদ্বোধন করেন। তবে এ রুটে এখনো ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। শাহবাজপুর (বাংলাদেশ)-মহিশাসন (ভারত) রুটের ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট, যা ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ, ৭ জুলাই ২০০২-এ বন্ধ হয়ে যায়। কুলাউড়া (বাংলাদেশ) থেকে শাহবাজপুর (ভারত) পর্যন্ত লাইন স্থাপন ও ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খোলার কাজ চলছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজ শেষ হয়নি।
বুড়িমারী (বাংলাদেশ)-চেংরাবান্ধা (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি ১৯৭১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। মোগলহাট (বাংলাদেশ)-গীতলদহ (ভারত) ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টে লালমনিরহাট-মোগলহাট সেকশনটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে বন্যায় মোগলহাট-গীতলদহ রুটে রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংসের কারণে ভারতের সাথে এই রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, আমরা বন্ধ ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টগুলো খুলে দেওয়ার কাজ হাতে নিয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে কুলাউড়া-শাহবাজপুর ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট (বর্ডার পয়েন্ট) চালু করা হবে। বাকি দুটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খুলতে সময় লাগবে। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হবে।”
এদিকে, ফেনী (বাংলাদেশ)-বিলোনিয়া (ভারত) রুটে আরেকটি নতুন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতীয় অনুদানে ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পুনর্র্নিমাণের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে রাস্তা আছে, কিন্তু আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের জন্য সেগুলোর অবস্থা যথেষ্ট ভালো নয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা, বেনাপোল-কলকাতা এবং তামাবিল-ডাউকি-শিলং-গুয়াহাটি রুটে বাস চলাচল করে। বুড়িমারী-শিলিগুড়ি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে সরাসরি বাস যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভারতের শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্র জানায়, তারা “প্রযুক্তিগত সহায়তা” নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে রোড ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রিপেরেটরি ফ্যাসিলিটি”। প্রকল্পের আওতায় দেশের ২২টি স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ২২টি রুটে মোট ১,৪৮০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে।
প্রকল্পটি জুন ২০২৫ এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে তিনটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ) রুট রয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ১,৭৭১ কিলোমিটার। সূত্র মতে, দুদেশের মধ্যে রেলপথে উভয় দেশের যাত্রী পরিবহণ হলেও মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে শুধু ভারত থেকে মালবাহী ট্রেনযোগে বাংলাদেশে পণ্য আসে। বাংলাদেশে পণ্য খালাস শেষে খালি কনটেইনার ভারতে ফিরে যায়। দুদেশের মধ্যে ট্রেনযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু করতে উভয় দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও পণ্যবাহী ট্রেন যাবে ভারতে।
রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে আসায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় আরও ১০ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধ থাকা বাকি রুট চালু হলে পুরোদমে রেলযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে। এতে বছরে ৫০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হবে বাংলাদেশ রেলের। বর্তমানে রেলে যাত্রী পরিবহণ করে বছরে আয় করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি